……………………..ফারহানা ইয়াসমিন সহকারি শিক্ষক ………………………………..
শিক্ষার সাথে সাহিত্য ও সংস্কৃতির সম্পর্ক ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হলো শিক্ষা। কোনো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ। তাই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চায় অভ্যস্ত করে তুলতে পারলে শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং দেশ ও জাতির উন্নতিতে তারা সফল অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
শিক্ষা একটি জাতির অবয়ব নির্মান করে,সাহিত্যে সে অবয়বের প্রতিফলন ঘটে আর সংস্কৃতি তাকে পূর্ণতা দান করে। এভাবেই একটি জাতির পরিচয় বিধৃত হয় তার শিক্ষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে।
একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। কারণ প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে শিক্ষার প্রথম সোপান।এই স্তরেই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ভিত রচিত হয়। এ স্তরে শিক্ষার্থী যা শিখবে, যেভাবে শিখবে তারই প্রতিফলন সে তার ভবিষ্যৎ জীবনে ঘটাবে।তাই প্রাথমিক স্তরেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চার বীজ বপন করা হলে ভবিষ্যতে তারা শিক্ষাক্ষেত্রে, দেশ ও জাতির উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখতে সমর্থ হবে।
নিয়মিত পাঠ্যক্রমের বাইরেও শিশুদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চায় শিক্ষকদের আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া এবং এর গুরুত্ব তাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। বিদ্যালয়ে সপ্তাহে একদিন সহপাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুদের কবিতা আবৃত্তি, গল্প পড়া ও বলা,গান, নাচ ইত্যাদি অনুশীলন করাতে হবে। সাথে সুন্দর হাতের লেখা ও শুদ্ধ গঠনের উপরও জোর দিতে হবে।
বই পড়ার অভ্যাস গঠনের পূর্বশর্ত হচ্ছে ভালো বইয়ের সমারোহ। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বুক কর্ণারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো মানের বই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা হাতের নাগালেই ভালো বই পাওয়ার সুযোগ পাবে এবং তাদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস সৃষ্টি হবে।
চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন অন্তত উপস্থিত বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। যেসব বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে, সেসব বিদ্যালয়ে মাঝে মাঝে শিশুতোষ অনুষ্ঠান, শিক্ষামূলক নাটিকা ইত্যাদি দেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিভিন্ন জাতীয় ও বিশেষ দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিদ্যালয়গুলো নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে শিশুদের বাংলা বানান, রচনা, কবিতা লেখা, গল্প বলা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের দেয়ালিকা প্রকাশের জন্যও উৎসাহিত করতে হবে। সাবলীলভাবে গঠনের যোগ্যতা বাড়াতে নিয়মিত পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি খবরের কাগজ পড়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এসকল কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রাথমিকের শিক্ষকরা অনায়াসে শিশুদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে তুলতে পারে।
শিক্ষারও একটা সংস্কৃতি আছে, যেমন সব বিষয়ের থাকে। শিক্ষার সংস্কৃতির নিহিত চাহিদা হলো মুক্ত পরিবেশ, অংশগ্রহণের অবাধ সুযোগ এবং প্রকাশের স্বাধীনতা। তাই স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র ভাবলে তার অনুকূল সাংস্কৃতিক পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে। আর সেই পরিবেশে আনন্দের সাথে শিক্ষা লাভ করেই শিশুরা রচনা করবে ভবিষ্যতের ভিত।
লেখকঃ ফারহানা ইয়াসমিন
সহকারি শিক্ষক, হানারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।