বর্নাঢ্যময় অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশ মানে নৌকা, বাংলাদেশ মানে আওয়ামী লীগ। আমাদের একটি দেশ, একটি জাতি, একটি দল। যে দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। লৌহ শক্তিতে ভাস্বর একটি রাজনৈতিক দলের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

যারা শত লাঞ্চনা, অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করেও দাড়িয়ে থাকতে পারে। সব রকম রাজনৈতিক সন্ত্রাস মোকাবিলা করে আজো যারা টিকে আছে।

এই ভূখণ্ডে র সাধারণ মানুষের সকল আন্দোলন এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশের মানুষের অধিকার আদায় এর জন্য হাসি মুখে জেল অত্যাচার সহ্য করতে। অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে।

যার উদাহরন বাংলাদেশের অন্য কোন দলের মধ্যে নেই। এদেশে সত্যিকার অর্থে একটি দলই গনতান্ত্রিক এবং গনতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার জন্য সবরকম ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাই বাঙ্গালির জাতীয় দাবীগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগএর হাত ধরে। আর সর্বশেষ এই দলটির নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম একটি বাংলাদেশ। আজকে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে গর্ব করে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগনের দল ।

আর তা হবেই কারন এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি। দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাষানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং সর্বশেষ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোন পিছনের দরজা দিয়ে সৃষ্টি হওয়া দল এটি নয়। কোন হত্যা ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যার জন্ম হয়নি। জন্ম হয়েছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।

অনেক বর্নাঢ্যময় সংগ্রামী অধ্যায় পার করে আওয়ামী লীগ এবার প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পূর্ণ করেছে। আজ তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তারিখে দলটির জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে থাকলেও সংগঠনের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক করা হয় তাঁকে। পরবর্তীতে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় ১৯৫২ সালে।

১৯৫৩ সালের সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠাকালে দলের নাম রাখা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৫ সালে মাওলানা ভাসানীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ধর্মনিরপেক্ষতার চিন্তা করে ‘‘মুসলিম’’ শব্দটি বাদ দেন। এরপর দলটি ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নাম ধারণ করে। স্বাধীন বাংলাদেশে যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে রূপ নেয়।

১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১ এই সাল গুলো শুধূ আওয়ামী লীগের জন্যই গুরুত্বপূর্ন নয় বরং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির সুচনা। তাই বলছিলাম স্বাধীনতা, বাংলাদেশ আর আওয়ামী লীগ অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ভাষারদাবিতে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দেয়, এমন কি নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২২৩ আসনের মধ্যে ১৪৩টি আসন পায় আওয়ামী মুসলিম লীগ। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে।

১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনের আওয়ামী লীগের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। যা ছিল বাঙ্গালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি। ৬ দফাকে কেন্দ্র করে বাঙ্গালির স¦ায়ত্তশাসনের দাবি জোরালো হয়ে উঠে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানে আইয়ুব খানের পতন ঘটে। গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ। ঐ বছরই ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচি উত্থাপন করা হয়।

১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করলেও ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেয়নি। এরপর এলো ১৯৭১, ৭ মার্চ। যা বাঙ্গালীর রক্তে লেখা। বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দিলেন ‘‘ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’’ ‘‘ তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রæর মোকাবিলা করতে হবে।” এরপরই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রি। ইয়াহিয়া খান বাঙ্গালিদের উপর গণহত্যাযজ্ঞ শুরু করে। একই রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ।

৯ মাস রক্তসংগ্রামের পর অর্জিত হয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য স্বতন্ত্র সঙবিধান প্রনয়ন করেন। ‘‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও অসা¤প্রদায়িক রাজনীতি এবং সমাজতন্ত্র তথা শোষণমুক্ত সমাজ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।’’ আর কোন দেশের সংবিধানে গনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র পাশপাশি আছে কি ? আর স্বাধীনতার তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্র বাহিনী বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়।

বলা যায় বঙ্গবন্ধু ২ বারের মত বাংলাদেশ স্বাধীন করে দেন। প্রিয় পাঠক ইাতিহাস পর্যালোচনা করে দেখুন তো আর কোন দেশের মিত্র বাহিনী এত দ্রুত কোন দেশ ছেড়ে চলে গেছে কি ? এটি সম্ভব হয়েছে আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুর মত নেতা থাকার কারণে।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে জীবনের সর্বশেষ কাউন্সিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন ‘আমাদের অস্ত্র ছিল না। সামান্য যা জোগাড় করতে পেরেছিলাম যেগুলো সমস্ত জায়গায় বাংলাদেশের মহকুমায় পাঠানো হয়েছিল। প্রত্যেক মহকুমায় আমাদের কমান্ডার ঠিক করা ছিল। প্রত্যেক জেলায় জেলায় আমাদের কমান্ডার ঠিক করা ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলন একদিনে হয় নাই। স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছে ২৫ বছর আগে। এই ২৫ বছর স্বাধীনতা সঙগ্রামের নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। তাই বলছি আওয়ামী লীগের জন্ম মানেই সংগ্রামের জন্ম। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠান জন্ম হয়েছে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠান এর আজ যদি মৃত্যু হয় তবে সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই তা হবে।

৭৫ এর ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবার শুরু হল বাঙ্গালীর সংগ্রাম। জাতির পিতাকে হত্যা করে আসল সামরিক শাসন। ২১ বছর আওয়ামীলীগ রাজপথে গনতন্ত্রপুনরুদ্ধারে আন্দোলন করেছে। এর মধ্যে ১৯৮৭ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন উল্লেখযোগ্য।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা রাজনীতি করে না। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করে। বঙ্গবন্ধু নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতেন, ‘ক্ষমতার জন্য যারা এসেছেন তার চলে যেতে পারেন। কেননা আওয়ামী লীগ ক্ষমতার রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ চায় জনগণের মুক্তি।’ আমার হাসু বুবুও এ ধরনের কথা বলেন , তিনিও ক্ষমতার রাজনীতি করেন না। ১৯৭০ সালে ৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে একাই লড়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের যে, কোন বন্ধু নেই, বিগত সংগ্রামগুলো থেকে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আজো তারা একা লড়ে যাচ্ছে। যে পরিমান রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের উপর হয়েছে তার সিকিভাগ যদি অন্য কোন দলের উপর হত তাহলে তারা টিকে থাকত কিনা সন্দেহ।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘শুধু একটা কথা বলে যাইÑ শেষ কথা আমার যে কথা আমি বারবার বলেছি সোনার বাংলা গড়তে হবে। এটা বাংলার জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা।

আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ আদর্শ নিয়ে কাজ করছে। আমরা আওয়ামী লীগের কর্মীরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। যদিও সোনার বাংলা একটি স্বপ্ন, অলীক। খুব চেষ্টা করলে এর খুব কাছাকাছি যাওয়া যায়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের জন্য খুশির বিষয় হল, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতেও আওয়ামী লীগ সরকারে থাকছে।

শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধিন আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে স্মরণীয় অবদান রেখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো হলো: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, অর্থনৈতিক মুক্তি, নারী ক্ষমতায়ন, কৃষিবিপ্লব, তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষ, শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন, বহির্বিশে^ বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বলকরণ ইত্যাদি। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন জুড়ি নয়, বরং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে বিশ^বাসীর কাছে পরিচিতি পাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমরা প্রার্থনা করি, আমাদের একমাত্র কান্ডারী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যেন সুস্থ ও নিরাপদ থাকেন । তিনি যেন আজীবন প্রধানমন্ত্রী থেকে আমাদের আলোকিত করেন। সেইসঙ্গে আজীবন আওয়ামী লীগ যেন সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে পারে। জয়তু শেখ হাসিনা। জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু; জয় হোক বাংলার মেহনতী মানুষের।

ড. মোহাম্মদ হাসান খান ; সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চাঁদপুর জেলা।

একই রকম খবর