আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় শিক্ষমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি

চাঁদপুর খবর ডেক্স : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২১তম জাতীয় সম্মেলন আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে। আজ বিকেল ৩ টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ২৫ মিনিটের একটি উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে।

সেখানে তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য। সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই দলটির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার। এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর অংশ নেবেন। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন ২১ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১০ টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে।

ডেলিগেট কার্ড, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, স্বেচ্ছাসেবক ইউনিফর্মসহ সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তৈরির কাজও শেষ। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রও প্রস্তুত হয়েছে।

অন্যদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনকে নির্বিঘœ করতে ঢেলে সাজানো হয়েছে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরা।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্মেলনস্থল, প্রবেশপথসহ চারপাশে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউ

দ্দিন নাছিম। আওয়ামী লীগের ২১ তম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে দলের সব স্তরে এখন আলোচনা সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন তা নিয়ে। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলীয় সাধারণ সম্পাদককে সরকারের বাইরে রাখার একটি পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা আছে অনেক আগে থেকে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মন্ত্রিসভা গঠন এবং জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়নের মাধ্যমে একটি বার্তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

তা হলো নতুনদের প্রাধান্য। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থতার ধকল কাটিয়ে উঠে আগের মতোই সক্রিয় হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দলীয় কাজে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন সারা দেশ।

আজ ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। এ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে দলটি। ধানম-িতে দলীয় প্রধানের কার্যালয় নেতাকর্মীদের পদচারণে মুখর। সেখানে ভিড় করা নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদকের বিষয়টি। অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন। আবার নতুনদের মধ্যে আলোচনায় আছে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নাম।

সিনিয়র কয়েকজন নেতা বলেন ডা. দীপু মনি কে সাধারণ সম্পাদক দিলে দলের ভাবমূর্তি আরো বাড়বে। তার যোগ্য নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ত্যাগী এই নেতাকে দিলে আগামীতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তার সাংগঠনিক দক্ষতা আর বুদ্বিমত্তায় দেশ এগিয়ে নিবে বলে মনে করেন দলের সিনিয়র নেতারা। তৃণমূলের নেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানান বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একজন জনপ্রিয় ত্যাগী কর্মীবান্ধব নেতা। তাকে সাধারণ সম্পাদক দিলে তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক শক্তি আরো বৃদ্ধি পাবে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের; যদিও কাউন্সিলররা বরাবরই এ দায়িত্ব তুলে দেন সভাপতি শেখ হাসিনার কাঁধে। তাই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। কাউন্সিলের শেষ দিন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়ে থাকে। কিছুটা সময় নিয়ে পরে পুরো কমিটি ঘোষণা করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম গণমাধ্যমকে বলেন, আগে থেকেই নবীন ও প্রবীণ মিলিয়ে দলের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসছে। আগামী দিনেও তাই হবে। সাধারণ সম্পাদক কে হতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান কমিটি খুবই ভালো করছে। তবে নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কে আসতে পারেন তা তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, দলকে জাতীয় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদে কারা আসতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নির্ভর করছে কাউন্সিলরদের ওপর। তাঁরাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

পরপর দুইবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার একাধিক নজির আছে আওয়ামী লীগে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চারবার এ দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জিল্লুর রহমান চারবার এ দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাক দুইবার করে ওই পদে ছিলেন। সর্বশেষ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুই দফায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

ওবায়দুল কাদেরও দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। সে ক্ষেত্রে অবশ্য মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হতে পারে তাঁকে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অনেক আগে থেকেই নারীর ক্ষমতায়নের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। তিনিই দেশে প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব তুলে দেন একজন নারীর হাতে। জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পর পর দুই দফায় দিয়েছেন একজন নারীকে।

এই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সম্মেলনে দলের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন উম্মে কুলসুম স্মৃতি। তাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে একজন নারী এলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মনে করেন কেউ কেউ। সেদিক দিয়ে আলোচনায় আছে দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত নারী বিষয় সম্পাদক ও তিন বারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির নাম।

একই রকম খবর