স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটসহ অন্যান্য জেলার বন্যায় উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদীর পানি অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিপৎসীমা এখনো অতিক্রম করেনি। মেঘনা নদীর সর্বশেষ পানির উচ্চতা ৩.৮৫ সেন্টিমিটার।
একই সাথে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পানিতে টুই টুম্বর খাল, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়গুলো। যে কোন সময় বন্যার পানির অতিরিক্ত চাপে বেড়িবাঁধের বাইরের মাছ চাষীদের ক্ষতির আশঙ্কায় সতর্ক বার্তা দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। শহর রক্ষা বাধের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সোমবার (২০ জুন) সকালে মেঘনা নদী সংযুক্ত ডাকাতিয়া নদীতে পানির অতিরিক্ত চাপ দেখাগেছে। স্বাভাবিকের চাইতে নদীতে স্রোত অনেক বেশী। পদ্মা-মেঘনা নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই। বিশেষ করে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত মেঘনার পশ্চিম পাড়ের চরগুলোর রাস্তাগুলো জোয়ারের পানি উঠে ডুবেগেছে। নিম্নাঞ্চল হওয়ার কারণে যে কোন সময় ডুবে যেতে পারে সেখানখার বসতবাড়ীগুলো।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ^র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, আজ সকালে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের নিয়ে ট্রলারে চরাঞ্চলের বসতী এলাকা ঘুরে দেখেছি। বর্ষা এলেই চরাঞ্চলে পানি ভরপুর থাকে। তবে পদ্মার পানির চাপে রাস্তাগুলোতে পানি উঠেছে। তবে এখনো বসতবাড়ীগুলো ডুবে নাই। এখানকার বাসিন্দাদেরকে সতর্ক থাকার জন্য বলেছি।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মৎস্য চাষীদের সতর্ক করে দিয়েছি। জেলেদেরকে বলা হয়েছে-বন্যার পানিতে পুকুর প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই নেট দিয়ে ঘিরে রাখার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। দেশের অন্যান্য জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবস্থার আলোকে আমাদেরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী মেঘনার পানি বিপৎসীমার খুবই কাছাকাছি অবস্থান করছে। গত ২৪ ঘন্টায় পানির উচ্চতা ছিলো সর্বোচ্চ ৩.৮৫ সেন্টিমিটার এবং সর্বনিম্ন ছিল ২.৭৬ সেন্টিমিটার। এর আগের দিন রবিবার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিলো ৩.৭৪ সেন্টিমিটার এবং সর্বনিম্ন ছিলো ২.৭৪ সেন্টিমিটার। আস্তে আস্তে পানি বিপৎসীমার খুবই নিকটে আসছে। চাঁদপুর নৌ-সীমানায় মেঘনা নদী প্রশস্থ হওয়ার কারণে দ্রুত পানি নেমে যায় সব সময়। সে হিসেবে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা আপাতত দেখছি না।
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সদস্য গোপাল সাহা জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষা এলে পানি বৃদ্ধি পায়। একই সাথে ঢেউ এর কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গত কয়েকদিন পুরান বাজারে প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্রের বাধঁ এলাকার মন্দিরের সামনের স্থানের অনেকাংশে ব্লক দেবে গেছে। যা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করলে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা এসে সংস্কারমূলক কাজ শুরু করেছেন। আশা করছি তাঁরা এ বিষয়ে আরো সতর্ক অবস্থানে থাকবেন।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল জানান, স্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে বাধঁ ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা বাঁধের নতুনবাজার ও পুরান বাজার এলাকা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। বাঁধের আশঙ্কাজনক স্থানগুলোতে ব্লক ডাম্পিং এর কাজও চলছে। আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৩ হাজার বালি ভর্তি বস্তা এবং ১৩ হাজার সিসি ব্লক মওজুদ রেখেছি।