আহম্মদ উল্যাহ : চাঁদপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে চাঁদপুরে গৃহহীন থাকবে না। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবাকরে পুনর্বাসনের নির্দেশনা বাস্তবায়ণে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৪টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার জমিসহ একক গৃহহস্তান্তর বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং কালে তিনি এ কথা বলেন
প্রেস ব্রিফিং কালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, মুজিববর্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান চলমান রয়েছে। মুজিববর্ষে উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারবে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের ৩য় পর্যায়ের (২য় ধাপ) শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে চাঁদপুর জেলার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টমিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দদের সাথে আজ প্রেস বিফ্রিং ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামি ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ৩য় পর্যায়ের ২য় ধাপে প্রায় ২৬,৩৯০ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। ১ম পর্যায়ে প্রায় ৬৬,১৮৯ জনকে, ২য় পর্যায়ে প্রায় ৫৩,৩৪০ জনকে ও ৩য় পর্যায়ের ১ম ধাপে প্রায় ৩৩,০০০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ প্রদান করা হয়েছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর জেলায় “ক’ শ্রেণির গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার এর সংখ্যা ১৬০৬ টি। ১ম পর্যায়ে গৃহের মাধ্যমে ১৩৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ে এ জেলায় একক গৃহের মাধ্যমে ১০৯টি পরিবারকে অর্থাৎ ২টি পর্যায়ে সর্বমোট ২৪৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৩য় পর্যায়ে ২২৩টি একক গৃহ প্রদানের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তন্মধ্যে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩য় পর্যায়ের ১ম ধাপে একক গৃহের মাধ্যমে ৫১টি, আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬২৯টি অর্থাৎ মোট ৬৮০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বাকি ৭২টি গৃহের মধ্যে আগামী ২১/০৭/২০২২ খ্রি. ৩য় পর্যায়ের ২য় ধাপে ৬৫টি পরিবারকে [যথাক্রমে হাজীগঞ্জে ২৯টি, শাহরাস্তিতে ২১টি, ও মতলব দক্ষিণে ১৫টি ] এবং অবশিষ্ট ৭টি পরিবারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গৃহ হস্তান্তর করা হবে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ৭টি গৃহ নির্মানের জন্য খাস জমিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে। ভালোবাসে মাটির কম্প্যাকশন না হওয়ায় কাজ শুরু করা হয়নি। এসকল পরিবারকে এক টাকা সেলামীতে দুই শতক জমি বন্দোবন্ত প্রদান করা হয়েছে। উক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রেশন, নামজারী ও খতিয়ান প্রদান বাবদ ১১৭০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এতে নাম জারীর জন্যও তাদের কোন টাকা ব্যয় করতে হয়না। প্রতিটি একক গৃহের আয়তন ৩৯৫ বর্গফুট। দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহে একটি টয়লেট, একটি রান্নার কক্ষ ও একটি ইউটিলিটি স্পেস রয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, মূলত চাঁদপুর জেলার খাস জমি উদ্ধার করে এই পুনর্বাসন করা হচ্ছে। নিস্কন্টক খাস জমি না পাওয়া গেলে অবশিষ্ট “ক’ শ্রেণির পরিবরকে জমি ক্রয়ের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য সময়বদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পুনর্বাসনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে জায়গা নির্বাচন, মাটি ভরাটসহ প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে হাজীগঞ্জে ১৪টি ও শাহরাস্তিতে ২১টি অর্থাৎ মোট ৩৫টি পরিবারকে জমি ক্রয়ের মাধ্যমে এবং খাস জমিতে হাজীগঞ্জে ১৫টি ও মতলব দক্ষিণে ১৫টি অর্থাৎ ৩০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ভবিষ্যতে বড়কোন জায়গা পেলে আমরা কবরস্থানের ব্যবস্থা করে রেখে দিবো। ভালোকে ভালো, খারাপকে খারাপ বলেত হয়। চাঁদপুর জেলার মানুষগুলো ভালো তাই সবকাজ গুলো ভালোভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। অপ্রীতিকর ঘটনা যে ঘটছে না তা নয়, তবে অনেক অনেকই পেশা দায়িত্বের জন্যে অন্য জেলাতে কাজ করে তখন তার নামের ঘরটি থেকে যায় তালা অবস্থায়। আমরা চাচ্ছি এবছরের মধ্যে ঘোষনা দিবো যে এজেলায় আর কেউ গৃহহীন নেই। ঘর দেয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার জেন্ডার প্রয়োগ করি না। যে প্রাপ্য সে-ই পাবে। আমরা চেষ্টা করছি এমন জায়গায় যেন গৃহ নির্মান না করা হয়, যেখানে ঘর ভেঙ্গে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘোরামারা গুচ্ছগ্রামে পানি ও শৌচাগারের সমস্যা সমাধান করা হবে। আমরা ভিক্ষুকদের পুর্নবাসন করার কার্যক্রম আগেই শুরু করেছি এবং কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য : জেলায় ১৬০৬টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ৭৫৫টি পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে এবং আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ম, ২য়, ও ৩য় পর্যায়ে ৩৬৭টি পরিবারকে ইতোমধ্যে পুনর্বাসন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ভূমহীন ৪৮৪টি পরিবারের মধ্যে ১৭৯টি পরিবারকে জমি ক্রয়ের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর প্রেসক্লারেব সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ও দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদী, সাবেক সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সেক্রেটারী (ভারপ্রাপ্ত) আল-ইমরান শোভন, দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আব্দুর রহমান, দৈনিক একাত্তরের সম্পাদক জিয়াউদ্দিন বেলাল, চাঁদপুর ফটোজার্নালিস্টের সভাপতি এম এ লতিফ, সাধারণ সম্পাদক কে এম মাসুদ, এখন টিভির জেলা প্রতিনিধি তালহা জুবায়ের।
এসময় উপস্থিত ছিলেন,জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার, এআরএম জাহিদ হাসান, সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি ফারুক আহমেদ, এস এ টিভির চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম আতিক, দৈনিক প্রিয় চাঁদপুরের সম্পাদক বোরহান উদ্দিন ডালিম, দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার বার্তা সম্পাদক আহম্মদ উল্যাহসহ জেলার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।