স্টাফ রিপোর্টার : পুরাণবাজার জগন্নাথ মন্দিরের জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে চাঁদপুর নতুন বাজার কালী বাড়ি মন্দির প্রাঙ্গনে সপ্তাহ ব্যাপী অনুষ্ঠান মালার তৃতীয় দিন গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
এ সময় তিনি বলেন, ধর্ম যার, রাষ্ট্র সবার। এ কথা যেমন বিশ্বাস করা হয় তেমনি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বাংলাদেশে ব্রিটিশ শাসনামল থেকেহিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এ রথযাত্রা উদ্যাপন করে আসছে। পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের বৃহৎ রথ ধামরাইয়ের রথটি পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেই রথটি জমিদার দামুদর সাহা তা উদ্যাপন করতেন। পাকিস্তানিরা এই রথটি পুড়িয়ে দেওয়ার সময় দামুদর সাহা ও তার পুত্রকেও আগুনে ফুড়িয়ে হত্যা করে। বর্তমানে এই রথটি ২৭ ফুট উুঁচ ও ২৭ ফুট চওড়া। এ বছর আমি এই রথটির উদ্বোধন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে সমবেত হয়ে থাকে। চাঁদপুরে জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রায় অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকেও ভাগ্যবান মনে করছি। এখানে গায়ককে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি যে গানটি গাইছ এটিকি ভজন সংগীত। জবাবে সে বলেছে না। এটি বিবেধ।
তিনি আরও বলেন, এই পৃথিবীতে আসাটা আমাদের যেমন সহজ তেমনি যাওয়াটা নিশ্চিত। ধর্ম নিয়ে আমরা এত লম্প জম্প কেন করি। তা করা ঠিক নয়। হিন্দুদের জন্য যেমন শশ্বান ঘাট তেমনি মুসলমানদের জন্য কবরস্থান। আমাদের মাঝে ধর্ম নিরপেক্ষতা থাকতে হবে। যার যার ধর্ম সে সে স্বাধীনভাবে পালন করবে। আমরা দেখি ধর্ম নিয়ে নানা ধরনের ঘাত প্রতিঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এখান থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা সৃস্টির সেরা জীব। একথা কেমনভাবে প্রশান দিতে হবে। যথাযথ স্থান থেকে আমরা ধর্ম কর্ম পালন করব। তবেই আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হব। রথ উৎসবটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এই উৎসব আমরা সবাই ভাগাভাগি করে নিব। সবাই মিলে উৎসব পালন করব। একে অপরের পাশে থাকব।
তিনি বলেন, পুরাণবাজার শহর রক্ষা বাঁধটি হরিসভা মন্দির প্রাঙ্গনে। বাঁধের উপর যারা বাস করে তারাই পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন কাটে এবং বাঁধ ছিদ্র করে পাইপ প্রবেশ করায়। এর জন্যই বাঁধে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের কাজ যেন কেউ না করে। পুরাণবাজারে গত কয়েকদিন পূর্বে একটি মন্দিরে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আমি প্রশাসনকে বলেছি অপরাধী যে হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাছাড়া উভয় পক্ষের সম্পত্তির দলিল দেখে মন্দিরের জায়গা মন্দিরকে এবং ব্যক্তির জায়গা ব্যক্তিকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। আমরা চাই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে চলতে পারে।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিমল চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন পাটওয়ারী এসডু, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি নরেন্দ্র নারায়ন চক্রবর্তী, জেলা জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি গোপাল সাহা, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রঞ্জিত রায় চৌধুরী প্রমুখ।
সভার শুরুতে প্রধান অতিথিসহ অতিথিদেরকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান, জগন্নাথ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক বিশাল গোবিন্দ দাসাদীকারী। রথ উদ্যাপন কমিটির আহŸায়ক সমর কান্তি সাহা, সদস্য সচিব সহদেব বর্মন।