চাঁদপুর খবর রিপোর্ট : চাঁদপুরে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফসহ আহলে হাদিসের ৩ বক্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চাঁদপুর পুলিশ প্রশাসন। ওয়াজ-মাহফিলে ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার অভিযোগে চাঁদপুরে তারা ওয়াজ করতে পারবেন না বলে চাঁদপুর জেলা পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।
এর মধ্য আলো দু’জন আলেম আছে, তারা হলেন : শাইখ আমান উল্যা বিন ইসমাইল আল-মাদানী ও শাইখ মো: জসিম উদ্দিনও রয়েছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচ-ী ইউনিয়নের বিটি রোডস্থ আখন্দ বাড়ি সংলগ্ন ইত্তেবায়ে সুন্নাহ মসজিদ ও মাদ্রাসার উদ্যেগে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বাদ আছর হতে ইসলামি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো।
এতে প্রধান অথিতি হিসেবে আলোচনা রাখবেন নারায়ণঞ্জের আল-জামিয়া আস সালাফিয়্যাহ পবা রাজশাহীর পরিচালক শাইখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ। তার আগমনের খবর শুনে তরপুরচ-ী গ্রাম ও চাঁদপুর শহরসহ বেশ কয়েকটি মহল্লায় সাধারণ মুসল্লিদের ক্ষোভ দেখা গেছে।
এ প্রতিবেদকের সাথে তরপুরচ-ী ইলিয়াছ মিয়া, বিল্লাল চকিদার, মোস্তফা মিয়া জানান গত রবিবার কুমিল্লা জেলা প্রসাশক আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফকে বির্তকিত আলোচক হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তার বক্তব্য ওই জেলায় নিষিদ্ধ করেছেন। এছাড়া তিনি তার বক্তব্যে রাষ্ট্র বিরোধি এবং ধর্মীয় বক্তব্য উপস্থাপন করেন বলে জানা গেছে।
মাওলানা নেয়ামতউল্যা বলেন, বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে পীর আওলিয়াদের দেখানো পথে মুসল্লিগণ ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন। হঠাৎ করে আমাদের তরপুরচন্ডীতে নতুন নিয়মে ধর্মীয় বিদি বিদান পালন করায় সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মুসল্লিরা আমাদেরকে বলেন, আপনারা মসজিদে আযান দেন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে নির্ধারিত সময় অনুয়ায়ি। কিন্তু এই ইত্তেবায়ে সুন্নাহ্ মসজিদে আযান দেওয়া হয় প্রতি ওয়াক্তের সময়ের পূর্বে। এতে করে গভীর রাতে আযান শুনে অনেক মুসল্লিরা ফজরের আযান মনে করে বিভ্রত হন। এছাড়া আরো কিছু বিষয় নিয়ে এলাকার মানুষ জনের সাথে তাদের ধর্মীয় ঘোরামি নিয়ে বাক-বিতা-া হয়।
এসব বিষয়ে একাধিকবার পুলিশ প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সেনের দিঘির পার এলাকায় আব্দুছ সোবাহান ও আলমগীর বলেন, ওরা ধর্মীয় কোনো বিষয়ে আলেমদের সাথে পরার্মশ না করে স্কুল পড়ুয়া কিশোরদের গোড়ামি শেখায়, এতে এলাকায় ফেতনা ছড়াচ্ছে। ওই সকল কিশোররা স্থানীয়দের সাথে কোনো বিষয়ে মতাবাদ ঘটলে জঙ্গীবাদের মত আচরন করে। এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে আমরা প্রসাশনের সহযোগিতা কামনা করছি। এলাকার ষাট উদ্বে জয়নাল আবেদিন বলে, ইত্তেবায়ে সুন্নাহ্ মাদ্রাসা ও মসজিদের পরিচালক আবুল কালাম একজন সৌদি প্রবাসী ছিলেন। তিনি কয়েক বছর হল এই প্রতিষ্ঠানটি করেছেন। এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে তার বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকাবাসীর সাথে তুমুল বিরোধ রয়েছে। সে কারো কথাই মানছেনা। আমরা এলাকাবাসী সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষে একাধিকবার বসতে ছেয়েছি। সে আমাদের কোনো কথাই কর্ণপাত করেনি। বরং প্রতি জুমায় বিভিন্ন এলাকা থেকে বির্তকিত ইমাম এনে নামাজ পড়ান। এর মধ্যে শাইখ আমান উল্যা বিন ইসমাইল আল-মাদানী ও শাইখ মো: জসিম উদ্দিনও রয়েছেন।
এ ব্যাপারে আবু-কালামের ব্যবহারিত মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ জন্য তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে কথা হয় সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো: নাসিম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। তার পরেও আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। স্থানীয় মুসল্লিরা যদি না চায় তাহলে বির্তকিত বক্তা আলোচনা করতে পারবে না।
এদিকে চাঁদপুরে ইত্তেবায়ে সুন্নাহ মাদ্রাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্সে মাহফিলকে কেন্দ্র করে দু’দল মুসল্লির মাঝে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) শহরের বিটিরোডস্থ মধ্য তরপুরচন্ডীর ১নং ওয়ার্ডস্থ রাবেয়া কলোনীতে জুমার নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। এদিকে ইত্তেবায়ে সুন্নাহ মাদ্রাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্সের সভাপতি আতাউল্লাহ শরীফ, সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মোহাম্মদ রাছেল, কোষাধক্ষ্য মাহফুজুর রহমান ভুলুসহ আরো কয়েকজন জানান, দুপুরে আমরা কয়েক’শ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিসমাজ ও আলেম সমাজ একত্রে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বের হচ্ছিলাম।
এমন সময় আখন্দ বাড়ী জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল উশৃঙ্খল লোক স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের মাঝে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে উস্কানী ছড়ায়। তখন তারা আমাদের এ মসজিদের দিকে কিছু অতিউৎসাহী উশৃঙ্খল লোকসহ অগ্রসর হয় এবং হামলা চালায়। হামলায় মসজিদ প্রাঙ্গণের সামনে নির্মিত গেইট ভাঙ্গচুর ও মসজিদে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের মাধ্যমে এলাকায় একটা উত্তেজনা অবস্থা সৃষ্টি করে। আমরা এমন অবস্থা দেখে স্থানীয় সচেতনমহল ও সাহসী মুসল্লিদের সহযোগিতায় প্রসাশনকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যপারে ওই আখন্দ বাড়ী জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওরা কুরআন হাদিস ব্যাতীত হানাফি মাজহাব অনুসরণকারীদের মুশরিক বলে। শুধু তাই নয় এরা সমাজের মুসল্লিদের শান্তি বিনষ্টে ব্যতিক্রম আমল করে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো জানান,ওরা বলে ওদের মতো ছাড়া অন্য যারা নামাজ আদায় করে তাদের নামজ হয়না। তাই একমাত্র ওরা ছাড়া আর কেউ সহিহ্ আকিদার লোক হতে পারেনা। সমাজে এই রকম ফেতনা ছড়ানোর অভিযোগে জুমার নামাজের শেষে দিঘিরপাড় এলাকার বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতী তলিবল্লা সাহেবসহ এলাকার মুসল্লি সমাজ তাদের বিকালের মাহফিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। পরে পুলিশের কথায় আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ শেষে সবাইকে সরিয়ে নিয়ে আসি।
এ ব্যপারে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী জানান,বিকালে ওখানে বিতর্কিত বক্তা দিয়ে মাহফিল করার কথা শুনে একরকম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এমন খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা করি। এলাকার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ওই মসজিদের বিকালের মাহফিল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেই। সেখানে দু’পক্ষকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছি। আপাতত সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধাণের ব্যপারে আশ্বাস দিয়ে তরপুরচন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং ইউপি সদস্য আরশাদ মোল্লা জানান, ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মসজিদের হামলা করার ঘটনাটি লোকমুখে শুনেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে আলাপ করে এ ব্যপারে সুষ্ঠু সমাধানের ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ।