চাঁদপুরে পরীক্ষা কেন্দ্রে অজ্ঞান ছাত্রী : জ্ঞান ফিরে দেখে নেই হাতের আংটি

মাসুদ হোসেন : দেশব্যাপী চলমান এসএসসি পরীক্ষা দিতে এসে কেন্দ্র থেকেই স্বর্ণের আংটি খোয়ালেন অসুস্থ এক অসহায় ছাত্রী।

রবিবার (৩০ এপ্রিল) চাঁদপুর সদর উপজেলার এম এম নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে আসেন একই উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর

আমজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাছনিম জাহান মিন্না (১৬)।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এই শিক্ষার্থী গত কয়েকদিন যাবত শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। চিকিৎসা চলাকালীন তাকে এম এম নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসেন তার মা সেলিনা বেগম।

সকাল ১০টা বাঝে পরীক্ষা শুরু হলে এর আধাঘন্টা পরেই তাছনিম জাহান মিন্না অজ্ঞান হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে তাকে অন্য কক্ষে নিয়ে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে তার জ্ঞান ফিরে। সে সময় তার আঙ্গুলে থাকা আংটি টা খুঁজে না পেয়ে সবাইকে জানান। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায় নি।

আসলেই ঐ ছাত্রীর আঙ্গুলে আংটি ছিল কিনা তা জানতে চাইলে পার্শ্ববর্তী ছাত্রীরা বলেন, আমরা পরীক্ষার প্রথম থেকেই মিন্নার হাতে আংকি দেখেছি। কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর হলে আসলে আর সেটি দেখি নি। এম এম নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়া ইতি রানী বলে, এই ছাত্রীর অজ্ঞান হওয়ার খবর পেয়ে কেন্দ্রের ২ নাম্বার কক্ষে গিয়ে আমরা কয়েকজন যখন তাকে অন্য কক্ষে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই তখনও তার আঙ্গুলে আংটি দেখেছি। পরবর্তীতে ঐ ছাত্রী জানায় যে তার আংটি নেই। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

ছোট সুন্দর আমজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাছনিম জাহান মিন্নার আংটি খোয়ানোর ঘটনায় পরীক্ষা কেন্দ্রে দেখা দেয় উত্তেজনা। অন্যান্য পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও জানান, ব্যাপক নিরাপত্তা বেষ্টিত এমন একটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে একজন পরীক্ষার্থীর আঙ্গুলের আংটি উধাও হয়ে যাবে তা সত্যিই অবাক করার বিষয়।

ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী তাছনিম জাহান মিন্না জানান, আমার পুরোপুরি জ্ঞান ফেরার একটু আগে কে যেন আমার আঙ্গুল থেকে আংটি টা খুলে ফেলেন। আমি তখন কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। এর কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসলে দেখি উক্ত কেন্দ্রের দায়িত্বরত চতুর্থ শ্রেনীর দুইজন নারী কর্মচারীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। তাদেরকে তখন বিষয়টি অবগত করি। এই ছাত্রী চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর পাটওয়ারী বাড়ির মৃত নবীন পাটওয়ারীর মেয়ে। অসহায় এ পরিবারে জন্ম নেয়া তাছনিম জাহান মিন্না পরীক্ষার কেন্দ্রে এসেও স্বর্ণের আংটি খুইয়ে হতভাগ।

তার মা সেলিনা বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, আমার মেয়ের জ্ঞান ফেরার পর আমাকে খবর দিলে আমি এসে দেখি মেয়েটি অসুস্থ হয়ে আছে। আমার মেয়ের হাতে চার আনার উপরে একটি স্বর্ণের আংটি ছিল। কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর সেটি আর পাওয়া যায় না। কেন্দ্র সচিবসহ দায়িত্বরত অন্যান্যদের জানালে তারা বলেন আমরা কি করবো। এমনিতেই হলে এসব জিনিস নিয়ে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ। এমন বক্তব্যের ব্যাপারে সেলিনা বেগম বলেন, আমি মেয়েকে ডাক্তারের কাছ থেকে সরাসরি পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসি। তার হাতে সবসময় আংটি টা পরিহিত থাকায় তখন আর এটা খুলতে ভুলে গেছি।

এ বিষয়ে ছোট সুন্দর আমজাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, এই ছাত্রীর অজ্ঞান হওয়ার খবর পেয়ে সাথে সাথে ছুটে যাই। স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা দিলে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠে দেখে তার আঙ্গুলের আংটি টা খুশি পাচ্ছে না। ঐ ছাত্রী ও তার মা এমনটাই আমাকে জানিয়েছেন। কে বা কাহারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারপরও কেন্দ্র সচিব সাহেবের সাথে আলাপ করবো।

এদিকে কেন্দ্র সচিব মোঃ সাখাওয়াত হোসেন পাটওয়ারী বলেন, উক্ত ঘটনার বিষয়ে আমার কাছে ঐ ছাত্রীর মা অভিযোগ করেছেন। আমি তার কক্ষ ও যেখানে তাকে চিকিৎসা দিয়েছে ঐ কক্ষে ভালো করে খুঁজে দেখতে নিয়োজিত কর্মচারীদের বলে দিয়েছি। এছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। এমনিতেই পরীক্ষার কক্ষে এ ধরনের কিছু নিয়ে প্রবেশ নিষেধ তাই কাউকেই চাপ প্রয়োগ করতে পারি না। তিনি বলেন, আগামী ২ মে মঙ্গলবার দ্বিতীয় পরীক্ষার দিন সবাই আসলে তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি দেখবো।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ কামাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি। অনাকাঙ্ক্ষিত এমন ঘটনার জন্য আসলেই আমি বিব্রত। যদিও কেন্দ্রে এমন কোন কিছু নিয়ে প্রবেশ নিষেধ তারপরও কেন্দ্র সচিব সহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একই রকম খবর