চাঁদপুরে প্রচুর দেশীয় গরুর আমদানি, দাম ছাড়ছেনা বিক্রেতারা

cow

স্টাফ রিপোর্টার : পবিত্র কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে চাঁদপুরের বিভিন্ন বাজারে প্রচুর দেশীয় ও ভেজালমুক্ত গরু উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু দাম ছাড়তে চাচ্ছেনা বিক্রেতারা। এর ফলে গরু কিনতে আসা সাধারণ ক্রেতারা বাজারে ঘুরে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ছেন।

শনিবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে গরুর সপ্তাহিক পাইকার ও সবচেয়ে বৃহত বাজার চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের সফরমালি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বছর এ বাজারে ভারতীয় গরু না আসয়া প্রচুর দেশীয় ও ভেজালমুক্ত গরুর আমদানি হয়েছে। কিন্তু বিক্রেতারা প্রতিটি গরুর দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি চাইছেন বলে দাবি করছেন সাধারণ ক্রেতারা।

চাঁদপুর সদরের চৌরাস্তা বাজারে চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের পাশেই বসেছে পশুর হাট : ঘটতে পরে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা।

ক্রেতারা জানান, যে গরু গত বছর এক লাখে বিক্রি হয়েছে সে গরু এ বছর দেড় থেকে দুই লাখে উঠেছে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার গরু ৮০ থেকে ৯০ হাজার চাওয়া হচ্ছে।

সফরমালি গরু বাজার মালিক হুমায়ন কবির খান জানান, এর আগের সোমবার এই বাজারে গরুর দাম স্বাভাবিক থাকলেও পরের বাজারে তা অস্বাভাবিক হয়ে উঠে। তবে এবার ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি ও ভেজালমুক্ত গরুর চাহিদা বেশি। এ কারণে দামও চাওয়া হচ্ছে বেশি। দামের উর্ধ্বগতি দেখে শেষ পর্যন্ত আমি নিজেও একটু বেশি দাম দিয়েই দুটি দেশি গরু কিনে নিয়েছি।

এ বাজারে গরু কিনতে আসা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা নান্নু হাজরা জানান, বাজার ভরা গরু, কিন্তু দামে মিলছেনা। সারাদিন ঘুরেও একটি গরু কিনতে পারিনি। এ জন্য পরের বাজারের অপেক্ষায় রইলাম।
সাপ্তাহিক এই বাজারটিতে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫ থেকে ৬ হাজার দেশিয় গরু উঠানো হয়। তবে এ বাজারের বৈশিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো প্রকার হয়রানী ছাড়াই মাত্র ৩০০টাকা হাসিলে যে কোনো দামের গরু কিনতে পারছেন।

একই অবস্থা চাঁদপুর সদর উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ইচলী চৌরাস্তা গরুর বাজারের। সেখানেও এ বছর প্রচুর দেশিয় গরুর আমদানি হয়েছে । গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এ বাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ২ হাজার দেশিয় গরু উঠেছে। অধিকাংশ গরু ১ লাখ টাকার উপরে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেউই গরুর দাম ছাড়ছেনা।

গরু কিন্তু আসা চাঁদপুর শহরের আদর্শ মুসলিম পাড়ার শরীফ হোসেন পাটোয়ারী বলেন, পুরো বাজার জুড়ে গরু আর গরু। কিন্তু দাম দেখে মনে হচ্ছে এবার অনেক সাধারণ মানুষ একা গরু কোরবানী দিতে পারবেনা।

ইচলী চৌরাস্তা গরু বাজারের ইজারাদারের পক্ষে বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বিল্লাাল জানান, মুলত এ বাজারটিতে গরু বেচাকেনা শুরু হবে রোববার থেকে। এখন বিক্রেতারা দাম বেশি চাইলেও সে পর্যন্ত দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বাজারের বৈশিষ্ট ক্রেতাকে প্রতিটি গরুর হাসিল বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রেতাকে ১ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে বাজার ইজারাদরকে।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে এ বছর সদর উপজেলার ৩০টি স্থানে গরুর হাট প্রস্তুত করা হলেও অধিকাংশ হাটে গরু কেনাবেচা শুরু হয়নি। তবে রোবাবার থেকে সব হাটেই বেচা কেনা চলবে।

এদিকে সড়কের উপরে অনেক গরুর হাট বসানোর কারনে যাত্রীদের দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনায় আশঙ্কায় রয়েছে।

ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির গরুর হাটগুলো সাজানো হয়েছে। কোনো কোনো হাটে গরু ভীড়। হাট-বাজারে গরু বেচা-কেনা পুরোদমে চলছে। আজকে অনেক স্থানে হাটের দিন। গরুর হাট ইজারা নেয়ার জায়গা ছাড়াও আশ-পাশের মাঠ-বিল ও সড়ক দখল করে হাট বসানো হয়ে থাকে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পূর্বের বছরগুলোতে প্রতিটি গরুর হাটই সড়কের উপরে বসতে দেখা গেছে। সড়কের উপরে হাট বসায় যানজট ও দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

পবিত্র ঈদুল আযহার পূর্বের ২ দিন সড়কের পাশের অধিকাংশ গরুর হাট সড়ক দখল করে গরু বেচা-কেনা করে থাকে। এ হাটগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বাজার হচ্ছে : চাঁদপুর সদরের বাগাদী (ইচলী) চৌরাস্তা, ওয়্যারলেস বাজার, বাবুরহাট বাজার, বাঘড়া বাজার, ঢালিরঘাট বাজার, শাহতলী বাজার ও মহামায়া বাজার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গেলে সড়ক ছেড়ে মাঠের ভেতরে গরুগুলো গাদাগাদি করে রাখে ইজারাদার। তারা চলে আসার পর পুনরায় সড়কে গরু চলে যায়। যার ফলে যানবাহনের যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঢাকা শহর থেকে বের হওয়ার দুর্ভোগের চেয়েও গরুর হাটগুলোর পাশের সড়কে চলাচলে বেশি দুর্ভোগ হয়ে থাকে।

যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবে পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশ, গ্রাম পুলিশসহ যৌথ টিম দিয়ে গরুর হাট এলাকার সড়কগুলো দখল মুক্ত রাখা দরকার। এ ব্যাপারে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল।

 

একই রকম খবর

Leave a Comment