চাঁদপুরে শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী হত্যা মামলা ২জন ডিস লাইনম্যান আটক

মনিরুজ্জামান বাবলু : চাঁদপুর শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী (৪৮) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অনুপ চক্রবর্তী শুক্রবার রাতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ২ জনকে আটক করেছে।

আটককৃতরা হচ্ছেন, মো: আনিছ ও মো: জামাল হোসেন। এদের বাড়ী শহরের ষোলঘর এলাকায়। ওরা ডিস লাইনম্যান হিসেবে চাঁদপুর ক্যাবল নেটওয়ার্কের স্বত্বাধিকারী মো: রমজান সরদারের স্টাফ। এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অনুপ চক্রবর্তী।

তিনি জানান, আমরা জয়ন্তি হত্যাকান্ডের রহস্য উৎঘাটনে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। খুব সহসা আমরা এ খুনের ব্যপারে আপনাদের জানাতে পারবো। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তদন্ত স্বার্থে আমরা সব বলতে না পরলেও এখন পর্যন্ত আনিছ ও জামাল নামের ২ ডিস ব্যবসায়ীকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করেছি। তারা দুজনে চাঁদপুর ক্যাবল নেটওয়ার্কের স্বত্বাধিকারী মালিক রমজানের স্টাফ হয়ে ডিস লাইনম্যান হিসেবে বাসা বাড়িতে সংযোগ দিতো।

এদেরকে গত বৃহস্পতিবার আটক অনেক খোঁজাখুঁজি করে আটক করা হয়। এদিকে এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার চাঁদপুর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির সাংবাদিকদের এক সংবাদ সম্মলনে জানান,জয়ন্তী হত্যাকান্ডে আমারা এখনও তেমন কোন শুভ সংবাদ আপনাদের দিতে পারছি না।তবে অচিরেই আমাদের অর্জন দেখাতে পারবো।

এজন্য আমারা আমাদের বিভিন্ন সংস্থাকে হত্যাকান্ডের রহস্য উটঘাটনে কাজে লাগিয়েছি।অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,হত্যাকান্ডে ব্যাবহৃত ধারালো অস্রটি আমরা উদ্ধার করতে পারিনি। তবে হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত বহুদূর এগিয়েছে।উল্লেখ্য,গত ২১ জুলাই রবিবার বিকালে পুলিশ চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় চাঁদপুরে স্কুল শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীর সহপাঠীর সকল পর্যায়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা হত্যার সাথে জড়িতদের আটক ও শাস্তির দাবীতে পৃথক পৃথক ভাবে কয়েকটি মানববন্ধন করেছে। আজ রোববার জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান,কেন্দ্রীয় শিক্ষক সমিতি নেতা আবুল বাসার সর্দার। চাঁদপুরে চাঞ্চল্যকর স্কুল শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী খুনের ঘটনার রহস্য এখনো পুলিশ উন্মোচন করতে পারেনি। কোনো ক্লু-বিহীন এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তবে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো: নাসিম উদ্দিন জানান, আমরা আশাবাদী ভালো কোনো সংবাদ সহসাই দিতে পারবে। গত সোমবার দুপুরে নিহত জয়ন্তী চক্রবর্তীর লাশ পোস্টমর্টেম শেষে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মীরশ্বরাইর উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাতে চট্টগ্রামের মীরশ্বরাইতে লাশ সৎকার করা হয়। সেখানে তার বোনের বাড়ির সাথেই তাদের নিজস্ব জায়গা থাকায় তার সৎকার তথা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সেখানেই সম্পন্ন করা হয় বলে নিহতের স্বামী অলোক গোস্বামী এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (২১ জুলাই) বিকালে শহরের ষোলঘর ওয়াবদা কলোনীর জরাজীর্ন ৪ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষিকার বাড়ী জেলার শাহরাস্তি উপজেলায়। স্বামীর বাড়ী কিশোরগঞ্জ জেলায়। স্বামী অলক গোস্বামীর সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনীতে বসবাস করতেন। তার ১ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে অনন্যা গোস্বামী এশিয়ান ফ্যাসিপিক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত, ছোট মেয়ে তন্বী গোস্বামী এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

একমাত্র ছেলে পার্থ স্বারতী গোস্বামী ঢাকা নটরডেম কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। ৬৬নং ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল বাবুল জানান, নিহত জয়ন্তী চক্রবর্তী পারিবারিক কাজের জন্য রোববার বিদ্যালয় থেকে ছুটি নেন। বিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী জয়ন্তী চক্রবর্তীর জন্ম তারিখ ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ। তিনি চাকুরীতে ১৯৯০ সনের ১৬ মে এবং অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ। তাঁর স্বামী অলক গোস্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডে উচ্চমান সহকারী পদে চাকুরী করতেন। বর্তমানে এলপিআরে আছেন।

চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে ওই শিক্ষিকার কাছে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়তে গেলে বাসার দরজা খোলা ও শিক্ষিকার গলাকাটা অবস্থায় মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯ কল দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঐ দিনই শিক্ষিকার বড় মেয়েকে নিয়ে স্বামী সকালে ঢাকায় যান।ওই শিক্ষিকা বাসায় একাছিলেন। তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে রোববারের জন্য ছুটি নিয়েছেন। ঘটনার সময় তার পরিবারের অন্য কোন সদস্য বাসায় ছিলো না।

একই রকম খবর