আবদুল গনি : ইসলামিক ফাউন্ডেশ চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলা ও ৮৯ ইউনিয়নের হাট-বাজারে, গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় ৪,৮৪২টি মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৫টি পাঞ্জেগানা মসজিদ। বাকি ৪,৫৯৭টি জুমা মসজিদ।
বাংলাদেশ ওয়াকফ বিভাগ চাঁদপুরের অডিটর মো.আলাউদ্দিন রোববার (৯ জুন) দৈনিক চাঁদপুর খবরকে জানিয়েছেন জেলার সবগুলো মিলে মাত্র ৩৫০টি মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, কবরস্থান, হেফজখানা, মন্দির ও গির্জা ইত্যাদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওয়াকফ নিবন্ধন রয়েছে।
এতে জমির পরিমাণ ১৯২৮.৪১ একর। বাকি ৪,২৪৭টি জুমা‘মসজিদের জমিরই সরকারি হিসেবে ‘ওয়াকফ’ নিবন্ধন নেই বা হয়নি। ‘ওয়াকফ’আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ স্থগিত করা বা আবদ্ধ করা অথবা স্থির রাখা কিংবা নিবৃত্ত রাখা।
ওয়াকফ ইসলামি শরিয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা। কোনো সম্পত্তির মালিক নিজের মালিকানা থেকে মুক্ত করে আলাহর সম্পত্তি ঘোষণা করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে জনকল্যাণ বা জনসেবার জন্যে উৎসর্গ করলে ঔ উৎসর্গ করার কাজটিকে ওয়াকফ বলা হয়। ধর্মীয় বিধি মতে, মসজিদ বা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আগে বা পর মসজিদের জায়গাটুকু অবশ্যই ওয়াকফ করার বিধান রয়েছে।
যদি ওই মসজিদে জুমার নামাজ চালু করা হয়, তাহলে অবশ্যই এটি করে নিতে হয়। অন্যকোনো সম্পত্তি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্যেও ওয়াকফ করতে পারে। যাতে ভবিষ্যতে কোনো ব্যাক্তি মালিকানা দাবি করতে না পারে।
চাঁদপুরের বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে মসজিদ বা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আগে বা পর মসজিদের জায়গাটুকু ওয়াকফ করার বিধান থাকলেও অনেক জমিদাতা বা জমির মালিক তা করেনি কিংবা ওয়াকফ করা হয়েছে অথচ বাংলাদেশ ওয়াকফ বিভাগ এর নথিভুক্ত বা নিবন্ধন করে নি। এছাড়া জেলার একাধিক মসজিদ রয়েছে যা সরকারি ভ‚মি দখল করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা বা কবরস্থান পরিচালনা করার একটি কমিটি থাকলেও এসকল প্রতিষ্ঠানের জমিটুকু ওয়াকফ করে নেননি বা জমির মালিক অজ্ঞাতসারেই ওয়াকফ করে দেন নি। এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজকে অতিমাত্রার সমাজসেবক বা সমাজহিতৈষী জাহির করে থাকেন।
এ ভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর বা যুগের পর যুগ। এর ফলে মসজিদের জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। রাতারাতি সুরম্য ভবন উঠছে বা দোকানপাট কিংবা ফলফলাদির গাছ রোপণ করে নিজেরাই ভোগ করছেন। এনিয়ে অধিকাংশ মসজিদ কমিটিতে অন্তঃদ্বন্দ্ব বা ঝগড়া লেগে রয়েছে। সরকারে ওয়াকফ বিভাগের কাছে এর কোনোই হিসেব বা তথ্য সংরক্ষণ নেই।
এদিকে বাংলাদেশ ওয়াকফ বিভাগ এর বিধি মতে, যে কোনো ওয়াকফকৃত জমির আয় থেকে ৫% ওয়াকফ বিভাগ প্রশাসনের হিসেবে জমা দিতে হবে। বাকি ৯৫% আয় ওয়াকফকালীন সময়ে যে যে শর্ত রেজিস্ট্রি করার সময় উলেখ ছিলো বা থাকে সে খাতে ব্যয় করতে হবে।
চাঁদপুরের যে সব মসজিদের ‘ জায়গার ওয়াকফ নিবন্ধন ’নেই কিংবা করা হয় নি সে সকল মসজিদগুলোর কমিটি ‘বাংলাদেশ ওয়াকফ বিভাগের প্রাপ্য ৫% অর্থ ফাঁকি দিচ্ছেন বা‘বাংলাদেশ ওয়াকফ বিভাগকে বঞ্চিত করছেন। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় আইন মতে,ওয়াকফ বিভাগকে দলিল করার ক্ষেত্রে যে সব স্ট্যাম্প বা অন্যান্য রাজস্ব প্রদেয় করার কথা তা’দিচ্ছেন না।
আবার কোনো কোনো কমিটি মসজিদের জমি উদ্ধারে নানা সলাপরামর্শ বা ধ্যান-দরবার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অযথা কালক্ষেপণ করতে হচ্ছে। ফলে মসজিদের উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘ বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রাণালয়ের অধীন। স্ব স্ব মসজিদ কমিটির সদস্যদের উচিৎ বিষয়টির ব্যাপারে এগিয়ে আসা ও সচেতন হওয়া। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চাঁদপুরের উপ-পরিচালক মো.খলিলুর রহমান বলেন, ‘জেলার প্রতিটি ছোট-বড় মসজিদে খতিব, মুয়াজ্জিন ও একটি করে পরিচালনা কমিটি রয়েছে। জুমা মসজিদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি তাদের ভালো করে জানার কথা। তারপরও জেলার ইমাম সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সাথে কথা বলব। তারা স্ব স্ব কমিটির সাথে যেন এ বিষয়ে কথা বলেন।