বিশেষ প্রতিনিধি ঃ চাঁদপুর-ঢাকা নৌ-পথের লঞ্চের খাবার ক্যান্টিন গুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন চড়াদামে ও গলাকাটা দামে খাবার বিক্রি করা হচেছ বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পথে যাতায়াতকারী শত-শত ক্রেতা যাত্রীদের সীমাহীর দূর্ভোগের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করতে দেখা যাচেছ।
লঞ্চের খাবার ক্যান্টিন পরিচালনাকারীরা প্রশাসন কর্তৃক দামের নির্ধারিত নিয়ম মানছেনা। এতে করে প্রতিদিন প্রশাসনের নির্দ্দেশ উপেক্ষিত হচেছ। এ অবস্থা দেখার যেন কেহ নেই? অধিকাংশ লঞ্চে টানানো হয়নি খাবারের মূল্য তালিকা । এমনই অভিযোগ যাত্রীদের ।
চাঁদপুর-ঢাকা নৌ-পথে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এ রুটে চলাচল করছে। চাঁদপুর থেকে ঢাকা গামী ও ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী সকল লঞ্চগুলোই বিলাস বহুল। এ কারণে যাত্রী সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিন্তু এসব লঞ্চের ক্যান্টিনগুলো যেসব ব্যক্তি ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করছেন তারা তূলনামূলক খাবারের মূল্য অনেক বেশি নিচ্ছেন। লঞ্চ ক্যান্টিন গুলোতে অস্বাস্থ্যকর খাবারের গলাকাটা দাম যাত্রীদের নিরুপায় হয়েই বাধ্য হয়ে দিতে হয়। এক ভাবে জিম্মি হয়েই অতিরিক্ত দাম দিয়ে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে সাধারন যাত্রীদের।
চাঁদপুর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের উর্দ্দেশে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চের বিরুদ্বে অভিযোগ, এখানে অতিরিক্ত দাম নিয়ে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়া বোতলজাত ও প্যাকেটজাত সকল পণ্যের গায়ের মূল্যের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বা কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি দাম নেয়া হয়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে নির্ধারিত মূল্য তালিকা দেওয়া হলেও কোন লঞ্চের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যাক্তিরা তা মেনে চলছে না। প্রতিটি লঞ্চের কোন একটিতেও নেই তাদের মূল্যতালিকা।
এমভি আব এ জম জম লঞ্চের যাত্রী মহিবুল্লাহ জানান, লঞ্চগুলোর মালিক প্রতিনিধিরা কেন্টিন পরিচালনার খোজ খবর রাখেন না। যার কারণে অধিকাং ক্যান্টিন মালিকরা ইচ্ছেমত খাবারের দাম বৃদ্ধি রেখে বিক্রি করে নিজেরা রাতারাতি অনেক অর্থের মালিক হচেছ। এ ভাবে বাড়তি টাকা নেওয়া একটি বড় অপরাধ হলেও তা’ দেখার যেন কেহ নেই। আমরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ইব্রাহিত নামের আরেক যাত্রী বলেন, দাম বেশী নিলেও সমস্যা নেই, কিন্তু খাবারের মানটা ভাল হওয়া দরকার। কারণ মানুষ অনেক সময় দূর দূরান্ত থেকে এসে ভ্রমন করে লঞ্চে এসে প্রয়োজনের তাগিদে খাবার ক্রয় করে গ্রহন করেন। তখন খাবারের মান নিয়ে যাচাই করার সময় থাকে না। তাই যে কোন খাবার পেলেই কিনে খেতে হয়। আর প্যাকেটজাত সকল পণ্যই নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনে নিতে হচ্ছে।
আবএ জম জম লঞ্চের ক্যান্টিন ম্যানেজার মানিক খান বলেন, আমরা লঞ্চে সব সময়ই প্যাকেজ অনুসারে কাবার বিক্রি করে থাকি। মুরগি, মাছ ও ডাল দিয়ে ১৫০ টাকা দামে প্যাকেজ হিসেবে খাবার বিক্রি করি বিগত বহু বছর যাবত। লঞ্চ মালিককে কেন্টিনের জন্য ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। সে টাকা উঠাতে হলে বেশী দামে খাবার বিক্রি করতে হচেছ। তিনি বলেন,আমাদেরকে বাধ্য হয়েই খাবারের দাম বেশি রাখতে হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন সাড়ে ৬ হাজার টাকা লঞ্চ মালিককে ভাড়া দিতে হচ্ছে। তাই একটু বেশিই রাখা হয় খাবারের দাম।
লঞ্চের ভিতরে থাকা স্টেশনারী দোকানী মিজান বলেন, আমাকে প্রতিমাসে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। এছাড়া মালামাল আনার জন্য ঘাটে লেবার খবর দিতে হয়। সব মিলিয়ে খরচ বেশি পড়ে। তাই প্যাকেটজাত পণ্য বেশি বিক্রি করতে হয়।
আবএ জম জম লঞ্চের মালিক পক্ষ ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা লঞ্চের ক্যান্ট্রিন এবং দোকানে নির্ধারিত মূল্যে খাবার বিক্রি করার কথা বলা হয়ে থাকে কিন্তু চাঁদপুরের সকল লঞ্চেই একই অবস্থা। আমরা রান্না করা খাবারের দাম বাজার অনুসারে নির্ধারন করতে বলেছি। আর প্যাকেট পণ্য নির্ধারিত মূল্যের ধরে বিক্রির করার কথা তাদের বলা হয়েছে।
জেলা ক্যাবের সদস্য বিপ্লব সরকার বলেন, লঞ্চে প্যাকেট জাত পণ্যের দাম বেশি নেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। যারা বেশি নিচ্ছেন তারা আইন লঙ্ঘন করছেন। আর যারা নিজেরা খাবার তৈরি করেন, তাদেরকে সহনশীল দামে বিক্রি করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি লঞ্চে খাবারের নির্ধারিত মূল্য তালিকা রাখার কথা থাকলেও কেউ তা পালন করছে না।
সনাক চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মোশারেফ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ভোক্তা অধিকার আইনে প্যাকেটজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি রাখা আইনগত অপরাধ। কোন ভাবেই প্যাকেটের নির্ধারিত মূল্যের বেশি বিক্রি করা যাবে না। আর কেউ বিক্রি করলে এর জন্য জেল-জরিমানা হতে পারে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাসেস্ট্রিট মো. জামাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিটি লঞ্চে খাবারের মূল্যতালিকা লাগানোর কথা বলা রয়েছে। লঞ্চে খাবারের দামবৃদ্ধি রাখা হয় আগেও আমাদের কাছে অভিযোগ ছিলো। আমরা সহসাই প্রতিটি লঞ্চে অভিযান চালাবো। যারা বেশি মূল্যে খাবার বিক্রি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।