চাঁদপুর খবর রিপোর্ট : চাঁদপুর পৌরসভা ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ৯১ কোটি ৬৪ লাখ ২৪ হাজার ২শ’ ৩২ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের নিচতলার হলরুমে পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ এ বাজেট ঘোষণা করেন।
পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, ১৪ তম বাজেট করছি। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই পৌর পরিষদের মেয়াদ আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত রয়েছে। এটিই আমার শেষ বাজেট। সীমিত সময়ের মাঝে সর্বাত্মক সেবা নগরবাসীকে দেয়ার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে পরিষদ চাঁদপুর পৌরসভার এমন অবস্থা ছিল না। আরও খারাপ অবস্থা ছিল। আমরা পরিষদের অনেক উন্নয়ণ করেছি। আমরা পৌরসভার মাধ্যমে শহরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছি।
বর্তমান সরকার নিরাপদ খাদ্য সহায়তা করছে। সরকারের সবার খাদ্য নিশ্চিত করেছে। এখন আমরা পৌরসভা থেকে নগরবাসীকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবাহ করছি। এটি একটি ব্রিটিশ আমলের প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর পৌরসভা। স্বাধীন দেশ পরিচালনার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সরকার আমাদের তা দিয়েছে। পাকিস্তানিরা যখন এদেশ থেকে চলে যায় তখন অনেক কিছুই ধ্বংস করে দিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু যখন এদেশকে উন্নত দেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তখনই আন্তর্জাতিক চক্র স্বপরিবারে তাকে হত্যা করে।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর পৌরসভা এসে আগে নাগরিকরা ভোগান্তিতে পড়তে হত। কিন্তু এখন ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। সকল কিছুই চাঁদপুর পৌরসভায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। চাঁদপুর বাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা কাজ করেছি। ভালোর কোন শেষ নেই, আরও ভালো করতে হবে। তবুও আমরা আমাদের স্বাধ্যমত চেষ্টা করেছি। আমাদের আরও অনেক দ‚র এগোতে হবে। একটি আধুনিক, নিরাপদ, মাদকমুক্ত শহর গড়ে তুলতে হবে।
পৌর মেয়র আরো বলেন, আমরা রাজনীতি করি জনগণের সেবা ও দেশের উন্নয়নের জন্যে। আমাদের দল, মত, গোষ্ঠি ও বর্ণ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হলো পৌরসভার সামগ্রিক উন্নয়ন ও পৌরবাসীকে সুষ্ঠ সেবা প্রদান করা। যার ফলশ্রুতিতে পৌরবাসীর সহযোগীতায় চাঁদপুর পৌরসভাকে মর্যাদাশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। পৌরসভার উন্নয়নে আমরা সকল শ্রেণিপেশার মানুষদের নিয়ে নগর সমন্বয় কমিটি (টিএলসিসি) করেছি। প্রতি মাসে এই কমিটির একটি করে সভা হয়। এই সভার মাধ্যমে সবার মতামত নিয়ে আমরা কর্মনির্ধারণ করি। যার ফলে চাঁদপুর পৌরসভায় এখন দুর্নীতি নাই বললেই চলে। চাঁদপুরের সকল রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন ও সংস্কার করা হয়েছে। শহরে এখন কোনো জলাবদ্ধতা নেই।
পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন হাওলাদারের সঞ্চালনায় আলোচনা ও প্রশ্নউত্তর পর্বে বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি মানুষ গড়ার জন্য চাঁদপুর পৌরসভা কাজ করছে। গত বছরের চেয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি বাজেট আজকে ঘোষণা দিয়েছে। হয়তো আগামীতে আরো বেশি বাজেট ঘোষণা দিবে। চাঁদপুর পৌরসভা নাগরিকদের সেবা দিয়ে যাবে। আগামীতে সিটি কর্পোরেশন করতে এই কর্তৃপক্ষ আরো কাজ করবে।
সহ-সভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু বলেন, নাছির উদ্দিন আহমেদ ১৪ বছর ধরে চাঁদপুর পৌরসভার দায়িত্বে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ করার যে ঘোষণা দিয়েছে সেই কাজ করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে চাঁদপুর পৌরসভার আয়তন ছিল মাত্র ৯ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে তার পরিধি বৃদ্ধি করে ২২ বর্গ কিলোমিটার করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন করার জন্য ৫৭ বর্গ কিলোমিটার প্রয়োজন। চাঁদপুর পৌর এলাকার রাস্তা-ঘাট আরও প্রশস্ত করতে হবে। তাহলে আমরাই এর সুফল ভোগ করব। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করে। আমরা সচেতন হলে এই শহর আরও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবে।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, গোলাম কিবরিয়া জীবন, বিএম হান্নান, ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহীন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির,দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বার্তা সম্পাদক আহসান উল্যাহ প্রমুখ ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা ক্যাব সভাপতি জীবন কানাই চক্রবর্তী, স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভ‚ইয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী এইচএম শামসুদ্দোহা, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আ. রব, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরাম চৌধুরী, কাজী শাহাদাত, শাহ্ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, বিএম হান্নান, শরীফ চৌধুরী,বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ল²ণ চন্দ্র স‚ত্রধর প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রুহমান ঢালী, পৌর কর্মচারী সংসদের সভিপতি আ. রশীদ সর্দার, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল সহ পৌরসভার সকল কাউন্সিলর, কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট নাগরিকগণ।
এ বাজেট অনুষ্ঠানে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের সরকার প্রদত্ত উন্নয়ন সহায়তা মঞ্জুরী ও বিশেষ মঞ্জুরী ৫ কোটি টাকা, অডিটরিয়াম নির্মাণে ১০ কোটি টাকা, শিশু পার্ক নির্মাণে ৫ কোটি টাকা, পৌর ভবন স¤প্রসারণ খাতে ১ কোটি টাকা, পৌরসভার প্রধান প্রধান খাল সংস্কার ও ভ‚মি অধিগ্রহণে ২ কোটি টাকা, ইউজিআইআইপি প্রকল্পে-৩ এ ২ কোটি টাকা, জলবায়ু পরিবর্তনে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অতি গুরুত্বপ‚র্ণ নগর উন্নয়ণ-২ এ ৫ কোটি টাকা সহ সর্বমোট ৯১ কোটি ৬৪ লাখ ২৪ হাজার ২শ ৩২ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। প্রাক্কলিক ব্যয় হিসেবে সমপরিমাণ অর্থ দেখানো হয়েছে।