আজ জনপ্রশাসন পদক গ্রহণ করছেন চাঁদপুরের ৪ কর্মকর্তা

আহম্মদ উল্যাহ : জনসেবামূলক কাজে প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘জনপ্রশাসন পদক-২০১৮’ পাচ্ছেন চাঁদপুরের সর্বজন প্রিয় হয়ে ওঠা আলোচিত জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানসহ ৪ কর্মকর্তা। নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় জনপ্রশাসন পদক ২০১৮ পাচ্ছেন চাঁদপুরের সাবেক ও বর্তমান এ কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান কারিগরি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করায় এবং জনসেবায় সাধারণ ক্যাটাগরিতে দলগত পর্যায়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়–য়া ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার এ পদক পাচ্ছেন।

আজ সোমবার (২৩ জুলাই) ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এ পদক গ্রহণ করবেন।

জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই চিঠি মনোনীত কর্মকর্তারাও হাতে পেয়েছেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের জনসেবার কাজে উদ্ভুদ্ধ করণে বাংলাদেশ সরকার এ পদক চালু করে। এর আগে চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডলসহ ৬ সরকারি কর্মকর্তা জাতীয় ভাবে এ পদক লাভ করেন।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান এ পুরস্কারটি পাচ্ছেন যশোর জেলার স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক হিসেবে। তিনি ২০১৬ সালের ৭ মে যশোরে স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগদান করেন।

পরে ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে চাঁদপুরে যোগদান করেন। উল্লেখিত পদ থেকেই তিনি সদ্য পদোন্নতি পেয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক হিসেব যোগদান করেন।

জনপ্রশাসন থেকে প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ্য করা হয়, যশোর জেলার স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জনসেবা প্রধানে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতি সরূপ আপনি জেলা পর্যায়ের (ব্যক্তিগত) ক্যাটাগরীতে জনপ্রশাসন পুরস্কার-২০১৮ এর জন্য চুড়ান্তভাবে মনোনিত হয়েছেন। এই গৌরবময় অর্জনের জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা জনসেবার জন্য কাজ করি। আমি যশোরে দায়িত্ব পালনকালে সেখানের ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভায় ডিজিটাল সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা করি। আমার এই কাজটি সারাদেশের ২৫০টি ইউনিয়ন পরিষদ এই মুহূর্তে ব্যবহার করছে। এই ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বর্তমান উন্নয়ন কার্যক্রম বেগবান হবে। নিঃসন্দেহে জনপ্রশাসন পদক আমাদের চাকরিজীবনে বিরাট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, ‘আগের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল দায়িত্বে থাকাকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আমরা স্থানীয় উদ্যোগে গৃহহীনদের গৃহদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। মূলত এ কাজের জন্যই আমরা জনপ্রশাসন পদকটি পেতে যাচ্ছি।’

এদিকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানসহ ৪ সরকারি কর্মকর্তা জনপ্রশাসন পদকের জন্যে মনোনিত হওয়ায় অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সোহেল রুশদী। তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদেরকে এ অভিনন্দন জানান।

উল্লেখ্য, চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান এর আগে যশোর জেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত ৫ মার্চ চাঁদপুরে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। আর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোর চাঁদপুরে যোগদান করেন। আর মাহবুবুল আলম মজুমদার বর্তমানে ফেনী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হাজীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে বৈশাখী বড়ুয়া ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার ভূমিকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে জনপ্রশাসন পদক পাওয়া ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার কৃতি সন্তান মো. মাজেদুর রহমান খান চাঁদপুরের ১৯ তম জেলা প্রাসক হিসেবে এ বছরের ৫ মার্চ যোগদান করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কন্যা সন্তানেরর জনক। ২০ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআইতে নিয়োগ পেয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।

এরপর তিনি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চাঁদপুরে যোগদানের পর থেকে তিনি তার কর্মকান্ডে এখানকার সর্বজনের কাছে অত্যান্ত প্রিয় হয়ে উঠেন।

দাপ্তরিক কাজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাধারণ মানুষের মতোই খুব সকালে এবং পড়ন্ত বিকেলে হাঁটতে বের হন। হাঁটতে হাঁটতে দরিদ্রপল্লির ভাগ্যাহত সাধারণ মানুষের খুব কাছে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা শোনেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

চাঁদপুরকে ভিক্ষুকমুক্ত করণে তিনি এ পর্যন্ত বহু কর্মক্ষম মানুষকে অর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাবলম্বি করে তুলেছেন। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ভালো কর্মকান্ড দিয়ে তিনি জেলাবাসীর হৃদয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয় সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে (ডিসি চাঁদপুর পেজে) সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনে তড়িৎ গতীতে তা সমাধানে তিনি এগিয়ে আসেন।

বিভিন্ন সেমিনারে জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘একজন মানুষ তার কর্মকে যখনি ইবাদত হিসেবে মেনে নিবেন তখনই তিনি কাজের সাফল্য পাবেন’। আজকে তার কাজই তাকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।

একই রকম খবর

Leave a Comment