চাঁদপুর জেলা প্রশাসকসহ ৪ কর্মকর্তার ‘জনপ্রশাসন পদক’ গ্রহণ 

আহম্মদ উল্যাহ : সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে জনপ্রশাসনে উদ্ভাবনী ধারণাকে কাজে লাগিয়ে নাগরিক সেবা সহজীকরণের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৯ ব্যক্তি ও ৩ প্রতিষ্ঠানকে ‘জনপ্রশাসন পদক-২০১৮’ দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে জনসেবামূলক কাজে প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘জনপ্রশাসন পদক-২০১৮’ পেয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানসহ ৪ কর্মকর্তা। নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় জনপ্রশাসন পদক ২০১৮ পেয়েছেন চাঁদপুরের সাবেক ও বর্তমান এ কর্মকর্তারা।

  • চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান কারিগরি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করায় এবং জনসেবায় সাধারণ ক্যাটাগরিতে দলগত পর্যায়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার এ পদক গ্রহণ করেছেন।

সোমবার (২৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই পদক ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের জনসেবার কাজে উদ্ভুদ্ধ করণে বাংলাদেশ সরকার এ পদক চালু করে। এর আগে চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডলসহ ৬ সরকারি কর্মকর্তা জাতীয় ভাবে এ পদক লাভ করেন।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান এ পুরস্কারটি পেয়েছেন যশোর জেলার স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক হিসেবে। তিনি ২০১৬ সালের ৭ মে যশোরে স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগদান করেন।

পরে ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে চাঁদপুরে যোগদান করেন। উল্লেখিত পদ থেকেই তিনি সদ্য পদোন্নতি পেয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক হিসেব যোগদান করেন।

জনপ্রশাসন পদক পেয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ‘এই পদক পাওয়ায় মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জিনি আমাকে এ পদকে ভূষিত করেছেন। আমরা জনসেবার জন্য কাজ করি। আমি যশোরে দায়িত্ব পালনকালে সেখানের ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভায় ডিজিটাল সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা করি। আমার এই কাজটি সারাদেশের ২৫০টি ইউনিয়ন পরিষদ এই মুহূর্তে ব্যবহার করছে। এই ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বর্তমান উন্নয়ন কার্যক্রম বেগবান হবে। নিঃসন্দেহে জনপ্রশাসন পদক আমার চাকরিজীবনে বিরাট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

জনপ্রশাসন পদক পেয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, ‘আমার এ অর্জনের জন্যে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া জানাই এবং কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জিনি আমার এই পদকের জন্যে নির্বাচিত করেছেন। চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল দায়িত্বে থাকাকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আমরা স্থানীয় উদ্যোগে গৃহহীনদের গৃহদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। মূলত এ কাজের জন্যই আমরা জনপ্রশাসন পদকটি পেয়েছি।’


এদিকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানসহ ৪ সরকারি কর্মকর্তা জনপ্রশাসন পদক পাওয়ায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন, দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সোহেল রুশদী।


এছাড়া ‘জনপ্রশাসন পদক-২০১৮’ পাওয়া অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হলো : নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণচর্চার উদ্যোগ নেওয়ায় জাতীয় পর্যায়ে এবার ব্যক্তিগত শ্রেণীতে জনপ্রশাসন পদক পান ময়মনসিংহের ভালুকার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব কামরুল আহসান তালুকদার। একই শ্রেণিতে পদক পান গাজীপুরের শ্রীপুরের ইউএনও রেহেনা আকতার, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ইউএনও মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রাশাসক (ডিসি) মো. সাবিরুল ইসলাম।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ময়মনসিংহের ত্রিশালের ইউএনও মো. আবুজাফর রিপন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরশাদ উদ্দিন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান আনম, সহকারী প্রোগ্রামার মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস দলগত পদক পান।

একই পদক পান নাটোরের ডিসি শাহিনা খাতুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রাজ্জাকুল ইসলাম, নাটোর সদরের ইউএনও মোছা. জেসমিন আকতার বানু, নাটোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর অনিন্দ্য রুল; ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গার ইউএনও মো. আবদুল মান্নান, শিক্ষা অফিসার মো. আবদুর রহমান, সহকারী প্রোগ্রামার মো. লিয়াজ মাহমুদ লিমন। আর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ পদক পায় গ্রিসের বাংলাদেশ দূতাবাস।

জাতীয় পর্যায়ে কারিগরিতে ব্যক্তিগত পদক পান নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী, এবং রাজশাহী জেলার দুর্গাপুরের ইউএনও মো. আনোয়ার সাদাত। এই ক্যাটাগরিতে দলগত পদক পান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এনএম জিয়াউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই সার্ভিসের সাবেক পরিচালক (বর্তমান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব) কবির বিন আনোয়ার, পরিচালক আবদুল মান্নান, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ও এটুআইয়ের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট খালিদ মেহেদী হাসান।

একই পদক পান ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. মাহফুজুর রহমান, ভূমি সংস্কার বোর্ডের সহকারী কমিশনার রেজাউল কবীর, এটুআই ন্যাশনাল কনসালটেন্ট মোহাম্মদ এনামুল হক, কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক প্রশাসক ও প্রকল্প পরিচালক এবিএম আজাদ, এম নুরুল আমিন, আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস, কুড়িগ্রামের সাবেক সহকারী কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারেছ আনছারী, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম সেলিম, জেলা সদর উপজেলার ইউএনও মো. আল আমিন পাল পারভেজ।

আর প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই পদক পায় বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড ও বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)।

উল্লেখ্য, চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান এর আগে যশোর জেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত ৫ মার্চ চাঁদপুরে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। আর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোর চাঁদপুরে যোগদান করেন। আর মাহবুবুল আলম মজুমদার বর্তমানে ফেনী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হাজীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে বৈশাখী বড়ুয়া ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার ভূমিকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে জনপ্রশাসন পদক পাওয়া ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার কৃতি সন্তান মো. মাজেদুর রহমান খান চাঁদপুরের ১৯ তম জেলা প্রাসক হিসেবে এ বছরের ৫ মার্চ যোগদান করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কন্যা সন্তানেরর জনক। ২০ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআইতে নিয়োগ পেয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।

এরপর তিনি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চাঁদপুরে যোগদানের পর থেকে তিনি তার কর্মকান্ডে এখানকার সর্বজনের কাছে অত্যান্ত প্রিয় হয়ে উঠেন।

দাপ্তরিক কাজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাধারণ মানুষের মতোই খুব সকালে এবং পড়ন্ত বিকেলে হাঁটতে বের হন। হাঁটতে হাঁটতে দরিদ্রপল্লির ভাগ্যাহত সাধারণ মানুষের খুব কাছে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা শোনেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

চাঁদপুরকে ভিক্ষুকমুক্ত করণে তিনি এ পর্যন্ত বহু কর্মক্ষম মানুষকে অর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাবলম্বি করে তুলেছেন। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ভালো কর্মকান্ড দিয়ে তিনি জেলাবাসীর হৃদয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয় সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে (ডিসি চাঁদপুর পেজে) সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনে তড়িৎ গতীতে তা সমাধানে তিনি এগিয়ে আসেন।

বিভিন্ন সেমিনারে জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘একজন মানুষ তার কর্মকে যখনি ইবাদত হিসেবে মেনে নিবেন তখনই তিনি কাজের সাফল্য পাবেন’। আজকে তার কাজই তাকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।

একই রকম খবর

Leave a Comment