ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গল্প

…………………………………………মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ……………………………………………

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় রয়েছে। তিনি একাধারে ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাচ্যের অন্যতম সেরা দার্শনিক। মূলত তিনি আজীবন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করে গেছেন।

ফলে অগাধ পাÐিত্যের অধিকারী এ মানুষটির গবেষণামূলক কর্মকাÐ নিয়েই সাহিত্যমহলে আলোচনা হয়েছে বেশি। কিন্তু তিনি যে গল্পের পথে হেঁটেছেন, একটি গল্পের বইও আছে তাঁর ‘রকমারি’ নামেÑসে বিষয়টি ওইভাবে আলোচনায় আসেনি।

এর কারণ কোনো লেখকের অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজকে গ্রাস করে ফেলে। মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গল্পের বেলাতেও তেমনি হয়েছে। যার কারণে গল্পকার মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে খুব কম সংখ্যক সচেতন পাঠকই জেনেছেন।

এটা ঠিক যে তিনি আমাদের উল্লেখযোগ্য গল্পকার নন, কিন্তু বাংলা ভাষা, সমাজ ও সাহিত্যের নিবিড় পর্যবেক্ষক হিসেবে গল্পে তাঁর সমাজ অবলোকন ও গন্তব্যকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গল্পগুলো পাঠ করে এমনটাই মনে হয়েছে।

আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে লেখা গল্প ‘বেহেশ্তের পত্র’। এ গল্পটি পড়ে মনে হয়েছে ছোটগল্পে নিবিষ্ট থাকলে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কাছে আমরা আরো ভালো কিছু লেখা পেতাম। ‘বেহেশ্তের পত্র’ পাঞ্জাবি পাঠান রহীম বখ্শ ও তার শিশু কন্যার গল্প। পেশায় সৈনিক রহীম তিন মাসের ছুটি পেয়ে বাড়িতে আসে। তার ছয় বছরের মেয়ে বাবাকে পেয়ে হাতছাড়া করতে চায় না। সে সারাক্ষণ বাবার সঙ্গ চায়। হঠাৎ রহীমের ছুটি বাতিল হয়, কিন্তু কন্যা তাকে যেতে দিতে চায় না।

এই দৃশ্যটি গল্পকার বর্ণনার মাধ্যমে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। গল্প থেকে কয়েকটি বাক্য উদ্ধৃতি দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে : ‘আজ আবার বাপ কেন যাইবেÑরহীম মেয়েকে বুঝাইতে পারিল না।

সে কতবার সম্মুখ যুদ্ধে সঙ্গীনের খোঁচায় শত্রæকে হটাইয়া দিয়াছে। কিন্তু আজ মেয়ের মুঠা হইতে সে তাহার আঙ্গুল টানিয়া লইতে পারিল না। সে আজ হার মানিয়াছে। লড়াইয়ে সে কতবার শত্রæর লাইন ভেদ করিয়া চলিয়া আসিয়াছে। কখনও সে যুদ্ধে বুদ্ধিহারা হয় নাই। এখন কিন্তু সে কি করিবে বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছিল না। তাহার মাথাটা আজ বড়ই গুলাইয়া যাইতেছিল।’ রহীম বখ্শ সেবার যুদ্ধে গেল কিন্তু আর ফিরলো না। বেঁচে থাকতে সে কন্যাকে চিঠি লিখতো।

মৃত্যুর খবর রহীমের স্ত্রী মেয়েকে দেয়নি। ফলে কন্যাটি প্রতিদিনই পোস্টঅফিসে গিয়ে পিতার চিঠির খোঁজ করে। কিন্তু তাকে কঠিন বাস্তবতার কারণেই হতাশ হতে হয়। মেয়েকে সান্ত¡না দেয়ার জন্যে মা নিজেই রহীম বখ্শের নামে চিঠি লিখে। মেয়ে সে চিঠি পেয়ে আনন্দে আটখানা হয়। চিঠিতে লেখা ছিল রহীম বেহেশতে আছে। সে ভালো আছে। আর এটাই তার শেষ চিঠি। তার জন্যে কন্যা যেন চিন্তা না করে! চিঠির কথা মা মেয়েকে বুঝিয়ে দিলেও অবুঝ শিশুর সেটি বোধগম্য হয়নি।

সে মাকে বলল, ‘‘আম্মাজান, আব্বাজানকে আসিতে বল, আমি আর রাগ করিয়া থাকিব না।’’ গল্পটি পাঠে পাঠককে শোকে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। রহীম বখ্শের ছ বছরের কন্যাটি করুণ মুখ, পিতার প্রত্যাবর্তন প্রতীক্ষা আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দৃশ্যময়তার কারণে গল্পের কন্যা শিশুটির জন্যে পাঠকের তীব্র ভালোবাসা তৈরি হয়। গল্পটিকে বিশ^াসযোগ্য ও দৃশ্যময় করে তোলা লেখকের কম প্রাপ্তি নয়।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বিলাত-ফেরত’ গল্পটি নানা কারণে বিশেষত্বের দাবিদার। এ গল্পের প্রধান দুটি চরিত্রই বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং স্ববিরোধীও। দীর্ঘ গল্পটিতে ব্যক্তি টানাপোড়েন, বিত্তের মোহ, ধর্ম ও ধর্মান্ধতা, প্রবাস-যাপনের প্রভাব উঠে এসেছে। গল্পের প্রধান চরিত্র আবদুল মজীদের বাবা জমিদার খোন্দকার সমীরুদ্দীন সকলকে সন্তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করেন।

তাই তিনি একই সাথে কংগ্রেসে চাঁদা দেন, রাজপুরুষদের জন্যে পার্টিও দেন; উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি গ্রামে জুনিয়র মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই যে স্বার্থগত দ্বৈরথ, তা সত্তে¡ও তিনি চান ছেলে আবদুল মজীদ ধর্মপ্রাণ হোক। শৈশব থেকে বাবার কড়া ধর্মীয় শাসনের মধ্য দিয়ে মজীদ বড় হয়। গল্পে মজীদ চরিত্রের বিকাশ ঘটে বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়ার পর।

সে জাহাজের ওঠার দ্বিতীয় দিনেই দীর্ঘদিনের রাখা দাড়ি, আচকান পায়াজামা আর তুর্কি টুপি বিসর্জন দেয়। নতুন চেহারার মজীদ বিলেত পৌঁছে আমূল বদলে যায়। গল্পে পিতার মৃত্যুর পর মজীদ বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়ির সবকিছু সাহেবী ঢংয়ে বদলে দেয় সে।

‘সবুজ সমাজ’ নামে সভা করে মজীদ ধর্মীয় সংস্কার নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু সবশেষে তার মুখে এক, মনে আরেক এবং সব কার্যক্রমই ফাঁপা ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। গল্পের শেষদিকে মজীদ প্রকাÐ জমিদারি প্রাপ্তির লোভে বিয়ের পিড়িতে বসে। যদিও বিয়ে হওয়ার আগেই পাঠককে চমকে দিয়ে এক বিলেতি মেম বিয়ের আসরে হাজির হন। মেমের কথাসূত্রে পাঠক জানতে পারে, মজীদ বিলেতে খ্রিস্টান হয়েছে। এই মেমই তার স্ত্রী। মেম মজীদকে টেনে গাড়িতে তুলে উধাও হওয়ার মধ্য দিয়ে গল্প শেষ হয়।

‘বিলাত-ফেরত’ গল্পটির বিপরীত একটি গল্প ‘লক্খীছাড়া’। এ গল্পে ধর্ম নিয়ে স্বার্থের খেলা কিংবা মারপ্যাঁচ নেই। আছে ধর্ম ও মনুষত্যের অপার উপস্থাপন। মানুষের সেবা করাই যে ¯্রষ্টাকে ভালোবাসার প্রকাশ সেটি ‘লকখীছাড়া’য় উঠে এসেছে। তালুকদারের বেখালি সন্তান রমযান স্ত্রী, সম্পদ সবকিছু হারিয়ে ফকির হতে চায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সে আবদুল্লাহ নামে একজন পীরের কাছে মুরিদ হতে যায়। পীর তাকে বলেন, যে আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালোবাসেনি, সে আল্লাহকে কেমন করে ভালোবাসবে? পীরের কথামত রমযান সৃষ্টির সেবায় বেরিয়ে পড়ে। সে একটি কুষ্ঠ আশ্রমে রোগীদের সেবা করে। শেষে নিজেও কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়।

পীরসাহেব হজ¦ করতে যাওয়ার সময় গোয়ালন্দে রমযানের দেখা পান। রমযান তার প্রিয় পীরের কাছেই মৃত্যুবরণ করে। পীরের অন্যসঙ্গীরা হজ¦ করতে গেলেও পীর যাননি। গল্পের শেষে তিনি বলেন, ‘লোকের দিল খুশী কর। এই হজ্জে আক্বর।’ প্রাসঙ্গিকতা অনুসারে লেখক গল্পের মাঝে মাঝে শেখ সাদীর শ্লোক ব্যবহার করেছেন। ফলে গল্পটি আরো স্পর্শনীয় হয়ে উঠেছে। সমাজ সচেতন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর ‘বিলাত-ফেরত’ ও ‘লক্খীছাড়া’ গল্পদুটির মাধ্যমে ধর্মকে উপজীব্য করে সমাজস্থ মানুষের ভালো ও মন্দÑদুটি চিত্রই তুলে ধরেছেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বহুভাষাবিদ ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ফরাসি ভাষার খÐকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনের ভাষাপ্রীতি তিনি গল্পেও ব্যবহার করেছেন। ফার্সি থেকে অনুবাদ করেছেন ‘নষ্টচন্দ্র’ গল্পটি। তাঁর ‘লা পারিযিয়েন’ গল্পে প্যারিস ও ফরাসি ভাষাপ্রীতির সাক্ষর আমরা দেখি। যদিও গল্পটি মূলত প্রেমের। গল্পে মেধাবী ছাত্র রশীদ বিয়ের একবছর পর স্ত্রী সালেহাকে রেখে উচ্চ শিক্ষার জন্যে বিলেতে যায়।

অক্সফোর্ডে ভর্তি শেষে পড়াশোনাই হয়ে উঠে তার মূল কাজ। অবসরে সে দেশ থেকে আসা স্ত্রী-স্বজনদের চিঠি পড়ে, চিঠির উত্তর দেয়। সাথে সাথে চলে ফরাসি ভাষা চর্চা। বন্ধুদের অনুরোধে গ্রীষ্মের বন্ধে রশীদ প্যারিসে বেড়াতে যায়। সুয্ান নামে এক কিশোরীর সাথে রশীদের পরিচয় হয়। কিশোরী ভারতবর্ষকে ভালোবাসে।

রশীদের কাছে ইংরেজি শিখতে চায়। বিনিময়ে সে রশীদকে ফরাসি শিখাবে। এ পর্যন্ত গল্পটি একরৈখিক চললেও প্যারিসে আসার পর গল্পে নতুন বাঁক উপস্থাপন করেন লেখক। রশীদ-সুয্ানের সম্পর্ক একসময় প্রেমে রূপ নেয়। এই মুহূর্তের প্রেম এতই তীব্র হয় যে, রশীদ দেশে থাকা স্ত্রী সালেহাকে তালাক দিয়ে সুয্ানকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুয্ানই সরে দাঁড়ায় রশীদের পথ থেকে।

এরপর ফরাসী শেখারও ইতি টানে রশীদ। এ গল্পের শুরু স্বদেশে এবং শেষ বিলেতে। সবকিছুর বাইরেও আলোচ্য গল্পে লেখক কয়েকটি বাক্যে সচেতনভাবেই তৎকালীন সমাজচিত্র তুলে ধরেছেন।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গল্পের শরীরে কখনো কখনো কাব্যিকতাও চোখে পড়ে। কিছু কিছু বাক্য যেন কবিতা কিংবা কবিতারই মত দর্শনঋদ্ধ। ‘‘আধ ভেজান জানালার পাশে রোজই বসি। আর রোজই দেখি নীচের গলি দিয়ে কত লোকজন, কত গাড়ী অবিরাম যায়। সেখানে বসি কেন? না ব’সে কোথায় যাব?’’ ‘বহুরূপী’ গল্পটি শুরু হয়েছে এমন কাব্যিক বাক্যের মধ্য দিয়ে।

আবার রম্যরসের গল্পও লিখেছেন শহীদুল্লাহ। ‘গেরস্থের বৌ’ গল্পে এক গেরস্থ মরুদেশের মেয়েকে বিয়ে করেছিল। মরুদেশে স্বাভাবিকভাবেই ছিল পানির অনটন। বিয়ের পর ভিনদেশের গেরস্থের বাড়িতে এসে মেয়েটি প্রথমবার নদী দেখে অবাক হয়।

এত জল কীভাবে এল, সব জল মানুষ নিয়ে যাবে না তোÑএমন চিন্তায় বউটি অস্থির হয়ে ওঠে। একদিন গেরস্থ বাড়ি ফিরে আবিষ্কার করলো, পুরো বাড়ি জুড়েই কেবল জলের কলসি আর জালা। বউটি ভেবেছিল, নদীর সব জল ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই জল জমা করা যাক! পুরো গল্পটিকেই সংক্ষিপ্ত ও সরস ভাষায় পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন লেখক।

কোনো কোনো গল্পে কবিতার ব্যবহারও করেছেন গল্পকার। গল্পের চরিত্রগুলোও বৈচিত্র্যময়। স্কুলের হেড মৌলভী, পাঞ্জাবি পাঠান, পীর, মরুদেশের মেয়ে, গেরস্থ, জমিদার, মেম, খলিফা, পাগল, উকিল, পত্রিকার সহকারী সম্পাদকসহ নানা মানুষের গল্প মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন তাঁর ঢংয়ে। ‘রসবতী’ গল্পটিকে লেখকের গল্প পরিবেশনের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। ‘রসবতী’র গল্পকথকের চরিত্রটি শহীদুল্লাহ নিজেই।

সেকারণেই হয়তো পত্রিকার সহকারী সম্পাদক গল্প চাইলে গল্পকথক বলেন, ‘আমার কলমে তেমন গল্প জমে না। একটী ভাষাতত্ত¡ সম্বন্ধে প্রবন্ধ লেখা আছে, যদি সেটা চানÑ’। সহকারী সম্পাদক লেখকের কাছে লেখা চাইতে এসেছেন। লেখক পুরানো ফাইল থেকে গল্প বের করে পড়তে শুরু করলেন। সহকারী সম্পাদক গল্প বলার শুরুতেই ব্যাঘাত করেন।

তিনি গল্পকথককে থামিয়ে বলেন, গল্পের চরিত্র পাঁচু নামটির পরবর্তে সুকুমার বা বিমল রাখলে ভালো হয়। এরপর গল্পকার পাঁচুর রসগোল্লা চুরি, বন্ধু নরেনের সেই রসগোল্লা ভক্ষণ, ধরা পড়ে যাওয়া এবং প্রধান শিক্ষকের হাতে নরেনের বেত্রাঘাত খাওয়ার মধ্য দিয়ে গল্পটি শেষ করেন। কিন্তু গল্পটি সম্পাদকের ভালো লাগেনি। তিনি জানান, গল্পে দু ছোকড়ার রসগোল্লা নিয়ে কাড়াকাড়ির পরবর্তে যদি ‘গোপালের ষোল বছরের সুন্দরী রসিকা মেয়ে নিয়ে’ কাড়াকাড়ি হলে গল্পটি জমতো।

তিনি গল্পকারকে কাটাকুটি করে গল্পটি সংশোধন করতে অনুরোধ জানান। পরে গল্পকারের কথামতো নিজেই ইচ্ছামত পরিবর্তন করে গল্পটি পত্রিকায় প্রকাশ করেন। এই গল্পটির গল্প যে সাদামাটা তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু মুহম্মদ শহীদুল্লাহ গল্পের ভেতরে যে আরেকটি গল্পের অবতারণা করেছেন, সেটি বিশেষত্বের দাবি রাখে। পাশাপাশি গল্পের মাধ্যমে সহকারী সম্পাদকের চরিত্রটিও পাঠকের কাছে ফুটে উঠেছে। ওইসময় এমন সম্পাদক চরিত্র থাকা অসম্ভব নয়। খুবসম্ভব ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর কাছে পত্রিকার জন্যে লেখা চাইতে আসা সম্পাদকের এমন কোনো ঘটনাকে ‘রসবতী’ গল্পে রূপ দিয়েছেন।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সেরা গল্প’ গ্রন্থের ভূমিকায় তাঁর সন্তান বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর লিখেছেন, ‘গল্পগুলোতে তাঁর যাপিত জীবনের ছায়াপাত ঘটেছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিন্তা ভাবনা, দর্শন, দৃষ্টিভঙ্গি, দেখা না দেখার জগতের ছায়া গল্পের শরীরে এসে পড়েছে। তবে এসব গল্পে তৎকালীন সমাজ, সমাজ বাস্তবতা, রাজনীতি, অবদমিত জীবনের নানা উত্থান-পতনের আখ্যান বেশ মোটা দাগে উঠে এসেছে।’

মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গল্পগুলো পাঠ শেষে মুর্তজা বশীরের পর্যবেক্ষণ যথার্থই মনে হয়েছে। লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি ভাষাবিদ, গবেষক ও দার্শনিকের আড়ালে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গল্পগুলো অনালোকিত রয়ে গেছে।

তাঁর গল্পগুলো তৎকালীন সমাজ, যাপন, মানুষের চিন্তা-চেতনা, বৈষম্য, সংস্কারের কথা বলে। পাশাপাশি এ সবকিছু নিয়ে পরোক্ষভাবে গল্পকারের সূ² পর্যবেক্ষণও পাঠকের চোখে পড়বে। এ সবকিছু মিলিয়েই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে নতুনরূপে আবিষ্কারের জন্যে পাঠক তাঁর গল্পগুলো পাঠ করবেনÑএই প্রত্যাশা রইলো।

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান গল্পকার ও প্রাবন্ধিক।

একই রকম খবর