স্টাফ রিপোর্টারঃ চাঁদপুর শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী খুনের ঘটনায় এখন কেউ আটক করতে সক্ষম হয়নি। তবে হত্যার ঘটনা উদঘাটনে চাঁদপুর মডেল থানসহ একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। বিষয়টি কিছুটা নিশ্চিত করছেন ময়নাতদন্তকারী চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আরএমও ডা: হাসিবুল হাসান।তিনি আরো জানিয়েছেন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে সবকিছু পরিস্কার হবে । ময়না তদন্তকারি কর্মকর্তা ও চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. হাসিবুল হাসান বলেন, কাল সকাল ১১ টার মধ্যে আমাদের কাছে ময়নাতদন্তের পূর্নাঙ্গ রির্পোট চলে আসবে, তখনই আমরা এব্যাপারে বলতে পারবো।
এব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অনুপ চক্রবর্তী জানায়, আমাদের কাছে এ মূহুর্তে কোন খবর নেই। থাকলে আমরা অবশ্যই জানাবো।
এদিকে চাঁদপুর শহরের আলোচিত ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী হত্যার একদিন পর তার স্বামী অলোক চন্দ্র গোস্বামী বাদী হয়ে সোমবার (২২ জুলাই) চাঁদপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে । মামলা নং ৪১। মামলায় আসামী হিসেবে অজ্ঞাত খুনিকে উল্লেখ্য করা হয়েছে।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে নির্দিষ্ট কাউকে আসামি করেনি বাদী পক্ষ। এদিকে এই এ ব্যাপারে নিহত জয়ন্তী চক্রবর্তী স্বামী অলোক চন্দ্র গোস্বামী জানায়, আমাদের জানামতে এরকম কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা, যারা এ ঘটনা ঘটাতে পারে। তবে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তাদের শাস্তি দাবী করছি।
তবে চাঁদপুর শহরে স্কুল শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী খুনের পুরো ঘটনাটিই রহস্যাবৃত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, খুনের শিকার শিক্ষিকার পরিবার ও তার সহকর্মী এবং ঘটনাস্থল পানি উন্নয়ন বোর্ড স্টাফ কোয়ার্টারের প্রতিবেশী কেউই এ হত্যাকা-ের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে তা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না। তাদের পারিবারিক কোনো শত্রু নেই, প্রতিবেশী সকলের সাথে চমৎকার সুসম্পর্ক, সহকর্মীদের কারো সাথেও কোনো বিরোধ নেই। তাহলে কেনো একজন শিক্ষিকাকে এমন নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হলো? হত্যাকারী কারা? কী কারণে গলা কেটে খুন করা হলো? ঘরের সব কিছুই অক্ষত রয়েছে। কোনো চুরি-ডাকাতির জন্যেও এ খুন নয়। তাহলে কী কারণ থাকতে পারে এ হত্যাকা-ের পেছনে? এ সকল প্রশ্নই এখন সকলের মনে জাগছে। কিন্তু প্রশ্নের কোনো উত্তর কেউ পাচ্ছে না।
নিহতের স্বামী, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, প্রতিবেশী কারোরই কোনো বিষয়ে সন্দেহ জাগছে না যে, খুনের পেছনে এ কারণটি থাকতে পারে। তাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অনুপ চক্রবর্তী মামলার তদন্তের শুরুতেই খুব হিমশিম খাচ্ছেন। কোনো ক্লু পাচ্ছেন না। তবে তিনি আশাবাদী, সময় লাগলেও রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ্য করেন, তিনি ঘটনার দিন রোববার সকাল সোয়া ৮টায় বাসা থেকে বের হন ৯টার ঈগলে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সাথে তার ছোট মেয়ে শ্রীপর্ণা গোস্বামী তন্বী ছিলো। তন্বী এবার চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। সে ঢাকা কোচিং করবে, সে জন্যে তাকে নিয়ে বড় মেয়ে অনন্যা গোস্বামীর কাছে যাচ্ছিলেন বাবা অলোক গোস্বামী। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, রোববার সকালে যখন তিনি ছোট মেয়েকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন, তখন তার স্ত্রী বাসার নিচে গেইট পর্যন্ত এসে তাদেরকে বিদায় জানান। ঈগল-৩ লঞ্চে উঠে পৌনে ৯টার দিকে তিনি তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে জানান যে, তারা লঞ্চে উঠেছেন।
এটাই জয়ন্তী চক্রবর্তীর সাথে স্বামী অলোক কুমার গোস্বামীর শেষ কথা। এরপর ঢাকা গিয়ে বড় মেয়ের বাসায় পৌঁছে স্ত্রীকে জানানোর জন্যে তিনি ফোন দেন। তখন সময় হবে দুপুর ২টা। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে স্ত্রী আর ফোন রিসিভ করেন নি। ফোন কয়েকবার করেছেন, রিং টোন হয়েছে, কিন্তু রিসিভ হয় নি। তখন তিনি (স্বামী) ভেবেছেন, স্ত্রী তো এখন স্কুলে, মোবাইল হয়ত তার ব্যাগেরভেতরে, সে জন্যে আওয়াজ শুনছে না হয়তো। বিকেল চারটার দিকে অলোক কুমার গোস্বামী তার অফিসের স্টাফ থেকে ঘটনা শুনতে পান। পরে তিনি তার তিন সন্তানকে নিয়ে রাতে চাঁদপুর চলে আসেন।
অলোক গোস্বামী এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের কোনো শত্রু নেই। তারা ষোলঘরস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন ১৮ বছর যাবত। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকুরি করেন। বর্তমানে তিনি এ অফিসের হিসাব বিভাগের ঊর্ধ্বতন হিসাব করণিক। তার বয়স বর্তমানে ৫৯ বছর। তার স্ত্রীর বয়স ৪৮ বছর। তা
দের দাম্পত্য জীবন খুবই সুখময় ছিলো বলে তিনি জানান। অফিসের কাজে তাকে অনেক সময় চাঁদপুরের বাইরে যেতে হয়েছে, আবার রাত ১টা কি ২টায়ও বাসায় ফিরতে হয়েছে। কিন্তু কখনো বাসায় কোনো ধরনের চুরি বা অন্য কোনো ঘটনা কখনো ঘটে নি। সে জন্যে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কোনো কারণ বা কোনো কিছু সন্দেহ মনের মধ্যে আসছে না। ঘরের সবকিছু অক্ষত, কিন্তু কারা কী কারণে এভাবে ঘরে এসে খুন করে গেলো, তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে আশা করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনসহ খুনিদের শনাক্ত করতে পারবে।