স্টাফ রিপোর্টার : অভিযোগ পিছু ছাড়ছেনা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে। সিলেবাস বানিজ্য, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, বিল ভাউচার পাসসহ কাগজপত্র প্রসেসিং, অফিস খরচের কথা বলে এবং বিভিন্ন অযুহাতে বিদ্যালয় প্রতি ও শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে শিক্ষা অফিস। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির যোগ-সাজসে এবং সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে এই অনিয়ম করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, সিলেবাস বিক্রয়, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, মাতৃত্ব ছুটি মঞ্জুরী, বকেয়া বিল উত্তোলন ও চিকিৎসাসহ নানা ধরনের ছুটি বিল, বই পরিবহন বিল, ক্ষুদ্র মেরামত বিল’সহ প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিভিন্ন বিল প্রদানে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে এবং নানা প্রকার জটিলতা সৃষ্টি করে নগদ টাকা ভূক্তভোগী শিক্ষকদের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে দূর্নীতিবাজ শিক্ষা কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠান হোক আর শিক্ষক হোক সকল বিলেই ভাগ বসানো যেন তাদের প্রাপ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে ভেঙ্গে পড়ছে প্রাথমিকের শিক্ষাব্যবস্থা।
সম্প্রতি শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাস, সিনিয়র সহকারি শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদন্নোতির ভূল তথ্য সংশোধন নামক ফি এবং বিল বাউচার পাসের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে খোদ শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যদিও তিনি বারে বারে তা অস্বিকার করছে। প্রশ্ন হলো তাহলে কারা জলগোলাচ্ছে। শিক্ষাকর্মকর্তা জড়িত না থাকলেতো এসব টাকা এ্যাকাউন্ট থেকে তোলা অসম্ভব।। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির ভুল তথ্য সংশোধনে কত টাকা নেয়া হয়েছে, তা না জানা গেলেও শ্রান্তি বিনোদন ভাতায় শিক্ষকদের কাছ থেকে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। তবে তথ্য সংশোধনে সর্বনিন্ম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে যার কাছ যা সম্ভব, তাই আদায় করা হয়েছে এবং প্রভাবশালী শিক্ষকদের কাছ থেকে কোন টাকায় নেওয়া হয়নি। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে উপজেলায় ৩৩৭জন শ্রান্তি বিনোদন ভাতাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে নেয়া হয় বলে জানা যায়। এরপর শুরু হয় বিল বাউচার পাসের খরচ বাবদ বিদ্যালয় প্রতি ৬শ ৫০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ। যা এখন পর্যন্ত চলমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, গত জুন মাসে প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সভায় বিল বাউচার পাশের জন্য বিদ্যালয় প্রতি ১ হাজার টাকা করে নির্ধারন করা হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষকগন। পরে ওই সভায় তাদের সাথে আলোচনা করে ৬’শ ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই ৬’শ ৫০ টাকায় এখন উপবৃত্তির কাজে বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত খরচের ১ হাজার টাকা থেকে সরাসরি হাতে কেটে রাখা হচ্ছে বলে জানান তারা।
জানাযায়, প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার উপবৃত্তি দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সেই উপবৃত্তি প্রদানে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র এবং আনুসাঙ্গিক ব্যয় বাবদ সরকার বিদ্যালয় প্রতি ১ হাজার টাকা দিয়ে থাকে এবং এই টাকা বিদ্যালয়ের একাউন্টে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকার বুলবুল তার ক্ষমতা বলে ওই টাকা উত্তোলন করে প্রত্যেক স্কুলের প্রধানকে ৩’শ ৫০ টাকা প্রদান করে বাকী ৬’শ ৫০ টাকা অফিস খরচ হিসেবে রেখে দিচ্ছে।
উপজেলায় ১৫৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরাদ্দ ১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা। বিদ্যালয় প্রতি ১ হাজার টাকার মধ্যে ৫% ভ্যাট বাদে ৯৫০ টাকা বিদ্যালয় পাবে। অথচ উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের মোবাইল একাউন্টে জমা হলেও বিদ্যালয়ের একাউন্টে এখনো জমা হয়নি। এই ১ হাজার টাকা থেকে বিদ্যালয়গুলোর বিল ভাউছার পাসের নামে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ৬শ ৫০ টাকা করে মোট ১ লাখ ২ হাজার ৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। তবে বিষয়টি স্বীকার করছে না উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকার বুলবুল ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
এ দিকে সিলেবাস বাণিজ্য ও সিনিয়র সহকারি শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদন্নোতির ভূল তথ্য সংশোধনের জন্য অফিস খরচের কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
এ সব বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকার বুলবুল বলেন, এগুলো সবই মিথ্যা কথা। শিক্ষকদের কাছ থেকে কোন টাকা নেয়া হয়নি। যদি কোন শিক্ষক নেতা টাকা নিয়ে থাকে এর দায়ভার অফিস নেবেনা। তবে কয়েকজন সহকারী শিক্ষাকর্মকর্তা বলেন, অফিস জড়িত না থাকলে কোন শিক্ষক নেতার সাহস নেই টাকা নেয়ার।
সিনিয়র সহকারি শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদন্নোতির ভূল তথ্য সংশোধন, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা এবং বিল বাউচার পাসে অফিস খরচের বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক মজিবুল হক জানান, যার অভিযোগ করেছে, তাদেরকে আমার সামনে নিয়ে আসেন। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ ছাড়াও গত ১৪ জুলাই মুঠোফোনে তার সাথে কথা হলে, তিনি উচ্চস্বরে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে গালমন্দ করেন এবং যারা টাকা দিয়েছে, তাদেরকে তার সামনে নিয়ে আসার কথা বলেন। অথচ তিনি টাকা নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার অনেক সহকর্মী অভিযোগ করেন।