শাহরাস্তিতে প্রতারক পল্টুর অভিনব প্রতারণা

স্বপন কর্মকার মিঠুন ॥ শাহরাস্তিতে গরু চুরি, প্রতারণার ফাঁদে পেলে অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ফয়েজ উল্যা প্রকাশ চোর পল্টু। তার প্রতারণার শিকার হয়ে কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর গ্রামের চন্ডিয়া বাড়ির কামাল হোসেনের স্ত্রী সুখি আক্তার আজ স্বামীর সংসার হতে বিতাড়িত হয়ে এক কন্যা শিশুকে হারাতে বসেছে। সুখি আক্তারের মতো আরো অনেক দুখি সুখি অসুখি হয়ে দিনাতিপাত করছে। তার প্রতারণার শিকার অনেক দুখ মিয়া রয়েছেন। কেউ মামলা করছেন আবার কেউ তার বাহিনির ভয়ে মামলা না করে সরে রয়েছন।

ভুক্তভোগী সুখি আক্তার জানান, আমারা শাহরাস্তি পৌরসভার কাজিরকামতা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন মহল্লার অধিবাসী। আমাকে কচুয়ার আশ্রাফপুরে বিয়ে দেয়। আমি আমার শ্বশুরালয়ে অবস্থান করি। কাজির কামতার বাড়িতে আমার মা নুরজাহানের সঙ্গে গত ৪জুন ২০১৮ ইং তারিখে পরিচয় হয়। মায়ের নিকট হতে আমার শ্বশুরালয়ের ঠিকানা নিয়ে আমার শ্বশুরালয়ে গত ২২ জুন ২০১৮ইং তারিখে পল্টু তার সমদ ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখার অজুহাত দিয়ে ঘরে যান। আমার মাও এ বিষয়ে জানতো না। আমিও মায়ের ঘটনার বিষয়ে জানি না। পল্টু আমার ননসকে তার সমদ ভাইয়ের জন্য পাত্রী হিসেবে দেখতে আসে। যথারীতি আমরা তাকে পাত্রী দেখাই। পল্টু নিজের সমদভাইকে স¤্রান্ত ও ধনী পরিবারের ছেলে দাবি করে পাত্রীকে স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে দেখাতে বলে আমি বাড়ির এক ভাবির ঘর হতে একভরি ওজনের একটি নেকেলস ও আট আনি ওজনের একটি আঙ্গুলি রিং পরাই। এরি মধ্যে পল্টু পাত্রির বেশ কয়েকটি ছবি তুলে তার স্ত্রীকে পাঠায়। স্ত্রীর পাত্রী পছন্দ হয়েছে। পল্টু আপত্তি জানায় আমার স্ত্রী পাত্রী দেখতে আসতেছেন, আপনারা একটু ঘর পরিস্কার করে রাখুন। পাত্রী পক্ষ হিসেবে সাধ্যানুযায়ী ঘর গুছিয়ে পাত্রীকে রেখে সকলে গোসল সারতে গেলে পাত্রীকে অজ্ঞান করে স্বার্ণালঙ্কার নিয়ে পল্টু পালিয়ে যায়। গোসল সেরে ঘরে আসলে সবাই পল্টুকে খোজাঁখুঁজি করে না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ি। ঘটনাটি বাড়িতে জানাজানি হলে লোকজন দেখতে ছুটে আসে। ঘটনার ব্যাপারে আমার পিত্রালয়ে মাকে জানাই। মায়ের নিকট হতে আশেপাশের মহিলারা খবরটি জানতে পারে। তাদের মধ্যে শুরু হয় নানাহ কথা।

চারদিকের মানুষজন বাড়িতে ছুটে আসলে বের হয়ে পড়ে পল্টুর আসল পরিচয়। জনৈক মহিলা বলেন এটা ঘুঘুরচপ চোরা পল্টুর কাজ। বেশ কয়েক দিন তার সন্ধান করে না পাওয়ায় সুখির শ্বশুরালয়ে শ্বাশুড়িকে ভাবির গহনা ফিরে দিতে চাপ দেয়। গহনা ফিরে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমার শ্বশুরালয়ের লোকজন আমার শিশু কণ্যাকে রেখে দিয়ে আমাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আমি স্বামী ও সন্তান হারা হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এক পর্যায় পল্টুর গ্রামের বাড়ি রায়শ্রী দক্ষিন ইউপির ঘুঘুরচপে শুক্রবার ২২জুন (আজ) যাই। বাড়িতে আমাদের উপস্থিতির টের পেয়ে পল্টু পালিয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আমি ও আমার মা ঘুঘুরচপ জামে মসজিদে বাদজুম্মা এলাকার মুসল্লিদের ঘটনাটি অবহিত করি। এলাকার মুসল্লিরা ফয়েজ উল্যাকে চোর পল্টু হিসেবে জানে। মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে এলাকার সর্বস্তরের লোকজনের মুখে একটাই কথা সে শুধু চোর ও প্রতারক নয়, সে মাদক ও মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত।

এলাকায় খবর নিয়ে জানা যায়, পল্টুর বাবাও এক সময় ছিঁচকে চোর ছিলো। বাবার পেশাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পল্টু এ খাঁতায় নাম লিখেছেন। ছিঁচকে চোর হতে পল্টু এখন স্থানীয় বিচার শালিসে বিচারপতির দায়িত্ব পালন করে থাকে। প্রচার রয়েছে থানা পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে রেখে তার এমন কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্টুর বিরুদ্ধে থানায় প্রতারণা মামলা রয়েছে জানা যায়। সম্প্রতি ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মোঃ হাসানের গরু চুরি, চিতোষী পূর্ব ইউপির আওয়ামীলীগ সম্পাদক আ. আজিজ মানিক তার প্রতারণার শিকার হন। এ ছাড়া শাহরাস্তি উপজেলার গ্রামখিলা, পৌরসভার নোয়াগাঁও মহল্লায়, কচুয়া উপজেলার পালগীরি সহ বিভিন্ন এলাকায় অপকর্ম করে ধরা পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তার বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ হলেও তা অদৃশ্য কারণে ধামাচাপা পড়ে যায়। বর্তমানে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় এলাকাবাসীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। পল্টুর অত্যাচার ও চুরি, প্রতারণা ঠেকাতে এলাকাবাসী ঐক্যদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছে। পল্টুকে আইনের আওতায় নিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসেনর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।

একই রকম খবর

Leave a Comment