স্টাফ রিপোর্টার : ধর্মীয় ভাবগাম্ভীয্যের মধ্যে দিয়ে পানিহাটি চিড়া দধি ও গীতা দান উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চাঁদপুর শ্রী শ্রী গৌর নিতাই প্রচার কেন্দ্রের আয়োজনে গত ২৬ জুন মঙ্গলবার চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে আয়োজিত ধর্মীয় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহবানে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। সেদিন সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদ আর লক্ষ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সকল ভালো কাজে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান হবে না। যারা ধর্মের নামে হানাহানি, মারামারি করে তাদের কোনো ধর্ম নেই। পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে, সকল ধর্মেই শান্তির কথা বলা হয়েছে। হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে ধর্ম পালন করা যায় না। মানুষের কল্যাণে কাজ করার নামই ধর্ম। তিনি ইসকনের কল্যাণকর কাজের প্রশংসা করে বলেন, মানুষের কল্যাণে সামাজের কল্যাণে শান্তির লক্ষ্যে যারা কাজ করে আমি তাদের পাশে সব সময় আছি। আগামীতেও থাকব। তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড-ও তুলে ধরেন।
ইসকন শ্রী শ্রী গৌরনিতাই প্রচার কেন্দ্র চাঁদপুরের পরিচালক শ্রীমান জগদানন্দ দাস ব্রহ্মচারীর সভাপ্রধানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসকন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি শ্রীপাদ কৃষ্ণকীর্তন দাস ব্রহ্মচারী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক কমিশনার শাহজাহান চোকদার, বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ শাহআলম বেপারী, মহিলা কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াছ, লক্ষ্মীপুর ইসকনের অধ্যক্ষ শ্রীমান সখাবেশ বলরাম দাস ব্রহ্মচারীসহ বরেণ্য আলোচকবৃন্দ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর শ্রী শ্রী গৌর নিতাই প্রচার কেন্দ্রের রত্নেশ্বর হরিদাস। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা জাগ্রত ছাত্র সমাজের পরিচালক শ্রীমান দ্বিজমনি গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র শাহনাজ রহমান, সাবেক পৌর কাউন্সিলর মাহফুজ বেপারী, চাঁদপুর সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, শ্রী শ্রী গৌর নিতাই প্রচার কেন্দ্রের নীরঞ্জন গৌর দাস, সর্বভঞ্জ নিতাই দাস, অনাদি নিতাই কৃপা দাস, দীপক কর্মকার, নন্দ প্রসাদ, শ্যামল দাস, তাপস মজুমদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানকে ঘিরে ভক্তদের মাঝে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। তারা নেচে গেয়ে অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত করে তোলে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত নারী-পুরুষ অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় গুরুবন্দনা, ভজন কীর্তন, বাউল সঙ্গীত, লীলা কীর্তন, পদাবলী কীর্তন, শ্রী শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত পাঠ, ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে গীতা গ্রন্থ দানসহ মহাপ্রসাদ বিতরণ।
বিকেল ৩টায় হরিনাম সংকীর্তন সহকারে বড়স্টেশন মোলহেড থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। এখানে অনুষ্ঠিত হয় লীলাকীর্তন, পদাবলী কীর্তন, বৈদিক নৃত্য ও নাটক। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই শত শত ভক্ত নর-নারীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত হয়ে উঠে।