স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে শূণ্যপদে উপজেলার চরভৈরবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে বদলীর প্রস্তাবে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে।
জানা যায়, হাইমচর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জুলেখা শারমিন চরভৈরবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণে দু’জনের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে সৃষ্ট জটিলতা কাটাতে গত ১৬ জুলাই চট্রগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক স্বাক্ষরিত পরিপত্রে (স্মারক নং ৩৮.০১.২০০০.০০০.১৯.০১২.৩৬৫.১৮-১৪৯৫/২) শিক্ষক বদলির বর্তমান নির্দেশিকা অনুসরণপূর্বক শূন্যপদে (একজনের নাম) প্রস্তাবসহ নীতিমালা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়।
শিক্ষক বদলির সর্বশেষ (৫ জুলাই ২০১৫) নির্দেশনায় বলা আছে, ‘একাধিক আবেদন থাকলে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বদলি করা যাবে না (ধারা ৩.১১)।
এরকম নির্দেশ থাকা সত্তে¡ও বিধিবহির্ভূতভাবে সিনিয়রকে বাদ দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) জুনিয়রকে বদলীর প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বলে চাঁদপুর টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী মো. নাছির উদ্দিন।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে বদলীর প্রস্তাব পাঠিয়েছেন হাইমচর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জুলেখা শারমিন।
হাইমচর উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিজ্ঞপ্তি (যার স্মারক নং-উশিঅ/হাইম/চাঁদ/বদলী/২০১৮/৩৩৩/৭ তারিখ ১২/০৬/২০১৮ইং) মোতাবেক শূন্যপদে উপজেলার চরভৈরবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে বদলীর আবেদন করেছেন উপজেলার জালিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সীমা দেবনাথ।
অন্যদিকে বিধিবহির্ভূতভাবে একই পদে তার বিপরীতে উপজেলার খলিফাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা বেগমও বদলির আবেদন করেছেন।
তবে উভয়ের যোগদান তারিখ (১১/১২/১৯৯৯ইং) একই হওয়ায়, যার বয়স বেশি বিধিমতে তিনিই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিনিয়র হিসেবে মুল্যায়িত হবেন বলে বদলি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে।
সে বিবেচনায় দেখা যায়, নাছিমা বেগমের জন্ম তারিখ ০১/০১/১৯৭১ইং। আর সীমা দেবনাথের জন্ম তারিখ ১২/১০/১৯৬৯ইং। বয়সে সীমা দেবনাথ এগিয়ে থাকায় বিধিমতে তাঁর আবেদনটি গ্রহণীয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
সীমা দেবনাথের লিখিত আবেদনসূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪৬ নং চরভৈরবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অবসরজনিত শূন্যপদে বদলির জন্যে আবেদন করেন সীমা দেবনাথ।
এমন আদেশ থাকা সত্তে¡ও বিধিবহির্ভূতভাবে নাছিমা বেগমের পক্ষে এক প্রকার বাধ্য হয়ে বদলীর প্রস্তাব করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার জুলেখা শারমিন।
বাধ্য হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাছিমা বেগম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করে চাঁদপুরের তিনজন ডাক্তারের বরাতে মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছেন। যার ফলে আমি মানবিক কারণে তার পক্ষে প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্যে পাঠাতে বাধ্য হয়েছি।’
এদিকে বিধিবহির্ভূত আবেদনকারী নাছিমা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি তাঁর ভাই উপজেলার উত্তর বগুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহিউদ্দিন মিয়াকে দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তার প্রতিযোগী সীমা দেবনাথের সার্ভিস বুক (চাকুরি খতিয়ান বই) ফটোকফি করে নিয়েছেন (যা চাকুরি বিধিবহির্ভূত)।
এ বিষয়ে সীমা দেবনাথ বলেন, ‘সম্পূর্ণ চাকুরি বিধিবহির্ভূতভাবে আমার সার্ভিস বুক ফটোকফি করেছেন নাছিমা বেগমের ভাই মো. মহিউদ্দিন মিয়া। এর উপযুক্ত প্রমানাধিও আমার নিকট সংরক্ষিত রয়েছে।’
তাঁর আশংকা, ‘নাছিমা বেগম তার চেয়ে সিনিয়র হওয়ার জন্যে চাকুরিতে যোগদানের তারিখ কিংবা পূর্বাহৃকে অপরাহেৃ রূপান্তর করা হতে পারে। এ আশংকায় চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত আবেদনও করা হয়েছে। যার অনুলিপি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালক এবং হাইমচর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অবগিতর জন্যে প্রেরণ করা হয়েছে।’
তাই বিষয়টি আমলে নিয়ে চাকুরি বিধিবহির্ভূত এ কাজটির সত্যতা যাচাইয়ে বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন।
সার্ভিস বুক ফটোকপির বিষয়ে নাছিমার বিরুদ্ধে সীমা দেবনাথের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
যদিও অনুসন্ধানের প্রথম দিকে হাইমচর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জুলেখা শারমিন বিষয়টি পাশ কাটিয়ে বলেছিলেন এ নিয়ে আমরা একটু ঝামেলায় রয়েছি, আপনারা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেন। আমরা এ বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেইনি। বিধি মোতাবেক যা করা প্রয়োজন, তাই করা হবে।’
সার্ভিস বুক জালিয়াতি নিয়ে সীমা দেবনাথের করা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত হলে বিস্তারিত জানা যাবে।
সরকারি অফিস থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে নথিপত্র সরানো হলে এর দায় কার ওপর বর্তায়? ‘এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি সে সময় ছুটিতে ছিলাম। সূতরাং তদন্ত হওয়ার আগে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপকালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘সাধারণ নিয়মে যিনি সিনিয়র তিনিই অগ্রাধিকার পাবেন। একজনের স্থলে দু’জনের নাম প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা, নদী ভাংতিসহ আরো কিছু বিষয় এখানে বিবেচনায় আসতে পারে। তাই এ ব্যপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা চেয়েছিলাম। নির্দেশনাও পেয়েছি। এখন সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।’
বদলি বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে বিলম্বের কিছুই নেই, কয়েক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে।’
সার্ভিস বুক সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখছি। তিনিতো আশংকার কথা বলেছেন, এমন কিছু পেলে অবশ্যই ইনকোয়ারি (তদন্ত) হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের (৫ জুলাই ২০১৫) প্রকাশিত বদলি নির্দেশিকার ৩.১১ ধারায় বলা হয়েছে উপজেলা/থানার মধ্যে একই পদে একাধিক আগ্রহী প্রার্থী থাকলে তাদের মধ্যে চাকরির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়ন করে উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসের নোটিশ বোর্ডে কমপক্ষে ৭ কর্মদিবস প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন। কোনো অবস্থাতেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বদলি করা যাবে না।