“ফণী”র আঘাতে হাজীগঞ্জের দেশগাঁও কলেজসহ গ্রামটি বিধস্ত

মনিরুজ্জামান বাবলু : ফণীর আঘাতে বিধস্ত হয়ে গেছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার দেশগাঁও গ্রাম। ওই গ্রামের
তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ১৫টি পরিবারের বসতঘর বিধস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় “ফণী”র আঘাতে ঘুম ভাঙ্গে পুরো গ্রামের। মাত্র ২০ মিনিটের ঝড়ে সব তচনচ হয়ে গেছে।

শনিবার (৪ মে) বিধস্ত হওয়া হাজীগঞ্জ উপজেলার দেশগাঁও গ্রামটি পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া। এসময় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান ফণীর আঘাতে বিধস্ত হওয়া পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখে গেছে, পুরো গ্রামে বিদ্যুতের তার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া একই গ্রামের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফণীর আঘাতে বিধস্ত হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো দেশগাঁও ডিগ্রি কলেজ, দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয় ও দেশগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

দেশগাঁও ডিগ্রি কলেজের গ্রন্থাগারসহ চারটি টিনসেট ভবন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনের টিনেরচালার হদিস নেই।

অন্যদিকে জরাজীর্ণ দেশগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে ফণী ঝড়।

দেশগাঁও ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ভোর ৪ টা ১০ মিনিটে ঝড়টা আসে। মাত্র দুই মিনিটের ফণী ঝড়ে কলেজসহ পুরো গ্রামটা তচনচ হয়ে গেল।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, দেশগাঁও গ্রামের ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান স্বপন, আব্দুল হান্নান, কবির হোসেন, জসিম উদ্দিন, মো. ফারুক, মো. শাহাজাহান, আব্দুল খালেক, রওশন আরার বসত ঘর ও একটি খানকাহ শরীফ ঝড়ের লÐভÐ হয়ে গেছে। ওইসময় কবির ও কবিরের স্ত্রী আহত হয়। কবিরের স্ত্রীকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ওই গ্রামের মহসীন, মুছা ও শামছুর রহমানের দোকানঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে ফণী ঝড়ে।

ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বাচ্চু ও দেশগাঁও ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আজহারুল কবির বলেন, কলেজের চারটি ভবন বিধস্ত হয়ে গেল। এখন আর ক্লাস নেয়ার কোন কক্ষ রইল না।

হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া জানান, সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া
হচ্ছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরী করে দ্রæত মেরামতের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে চরাঞ্চলে প্রায় ২ শতাধিক বসত ঘর ও গাছলপালা ভেঙে লÐভÐ হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ছিন্নমূলদের বেশ কয়েকটি ঘর। তবে এই ঘটনায় কেউ হাতহত হয়নি।

শনিবার আনুমানিক ভোর ৪টার দিকে সদর উপজেলার রাজরাজেশ^র ইউনিয়নের শিলারচর, খাসকান্দি, মান্দের বাজার
গ্রামে প্রচÐ গতির ঝড়ো হাওয়ায় বসতবাড়ীগুলো ভেঙে পড়ে ও গাছপালা তচনচ হয়ে যায়।

রাত সাড়ে ৩টায় সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া ফেরিঘাট এলাকায় গাছ ভেঙে ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ৪টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার থেকে চাঁদপুর-ঢাকা নৌ রুটের সকল নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে বন্ধ রয়েছে চাঁদপুর-শরীয়তপুর হরিণা ফেরিঘাট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ রয়েছে। চরাঞ্চল থেকে ৫হাজার লোককে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

একই রকম খবর

Leave a Comment