বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়ায় পারিবারিক কলোহের জের ধরে স্ত্রী বেবী বেগম (৪৫) কে নির্মম ভাবে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যার জন্য ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিলে ট্রেনের সাথে ধাক্ক লেগে মুখমন্ডল ও মাথা ফেঁটে মারা যায় স্বামী খোরশেদ আলম পাটওয়ারী (৬৪)। পুলিশ পৃথক ঘটনাস্থল থেকে উভয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
রোববার (১৪ জুলাই) ভোরে ওই ইউনিয়নের গুলিশা গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে। পরে খোরশেদ আলম সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চাঁদপুর-লাকসাম রেল পথের শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে লাকসাম থেকে ছেড়ে চাঁদপুরগামী ডেম্যু ট্রেনে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান। বেবী-খোরশেদ দম্পত্তির ৩ কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের সকলেরই বিয়ে হয়েছে।
হত্যার শিকার বেবী বেগম চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার হাঁসা গ্রামের শেখ বাড়ীর মৃত আবুল হাশেম শেখের মেয়ে। খোরশেদ আলম সদরের বালিয়া ইউনিয়নের পাটওয়ারী বাড়ীর মৃত আবদুল কুদ্দুছ পাটওয়ারী। বেবী-খোরশেদ দম্পত্তির ৩ কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের সকলেরই বিয়ে হয়েছে।
বেবী বেগমের বড় ভাই মফিজুল ইসলাম শেখ জানান, বেবী আমার ছোট বোন। সকালে আমার ভাগ্নি ফোন করে বলে তার পিতা ট্রেনের নীচে পড়ে মারাগেছে। তাৎক্ষণিক সদর হাসপাতালে এসে দেখি খোরশেদের মরদেহ পড়ে আছে। সাথে সাথে ওই এলাকার ইউপি সদস্য দেলোয়ার মিজিকে ফোন দেই। ইউপি সদস্য তাকে জানান, তার বোনকে কুপিয়ে হত্যা করে খোরশেদ আত্মহত্যা করেছে।
মফিজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তার বোনের মৃত্যুটি পরিকল্পিত। বোনকে এর আগেও পারিবারিক কলোহে মারধর করেছে খোরশেদ।
বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে বেবী বেগম এর ভাইদের নিয়ে ওই বাড়ীতে যাই। পরে খোরশেদ আলমের ঘর তালাবদ্ধ পাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে ঘরের দরজা খুলে দেখতে পাই একটি মরদেহ পড়ে আছে। পরে বুঝতে পারি বেবী বেগমের মরদেহ। ধারণা করা হচ্ছে খোরশেদ স্ত্রীকে হত্যা করে নিজে চাঁদপুরে গিয়ে ট্রেনে নীচে পড়ে মারাগেছে। কি কারণে হত্যা এবং আত্মহত্যা তা বলা যাচ্ছে না। পারিবারিক কলোহ থেকে এই ঘটনা হতে পারে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করলে রহস্য উদঘাটন হবে।
চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার সফিকুল ইসলাম জানান, দূর্ঘটনার খবর পেয়ে স্টেশনের লীডার ওসমান গনি কয়েকজন ফায়ারম্যানসহ বঙ্গবন্ধু সড়কের রেললাইন থেকে গুরুতর অবস্থায় খোরশেদ আলমকে উদ্ধার করে সকাল ৮.৩৫ মিনিটে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মিজানুর রহমান কিছুক্ষণ পরেই তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রব জানান, কী কারণে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে পারিবারিক কলহই মনে হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি স্ক্র ড্রাইভার ও হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাসিম উদ্দিন জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে বেবী বেগমের মরদেহ উদ্ধার করেছে এবং খোরশেদ আলমের মরদেহ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। ঘটনাটি তদন্ত শেষে আইনানুনগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন , চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী।