………………………………………………………:মনিরুজ্জামান বাবলু :…………………………………….
প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লেখা ফকির আলমগীরের কন্ঠে মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম/ পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না/ এমন দরদী ভবে কেউ হবেনা আমার মা গো গানটির যথার্থ কালে কালে প্রতিটি ঘরে ঘরে মা-সন্তানের সম্পর্ক দৃঢ়তা বাড়াবে।
মানুষিক ভারসাম্যহীন মা-ছেলের যাযাবর জীবনের গল্প জানতে গিয়ে মনে পড়ে ওই গানটির কথা ও সুর। প্রায় দুই বছর ধরে মাকে নিয়ে ভারসাম্যহীন ছেলে আরিফ হোসেনের ছুটে চলা।
রবিবার সকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, বৃদ্ধা মা এখন অনেকটা সুস্থ্যবোধ মনে করছেন। বৃদ্ধা মায়ের শরীরটা এখন অনেক হালকা হয়েছে। পাউরুটি আর জুস খাচ্ছেন।
শনিবার বিকালে হাজীগঞ্জ উপজেলার এসএম মিরাজ মুন্সী মা-ছেলের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন। মানবিক বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদকর্মী ও পুলিশের দৃষ্টিতে আসে। সেই মাকে এখন হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিচর্যা ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ওই বৃদ্ধা মায়ের নাম মমতাজ বেগম। বয়স প্রায় ৭০। স্বামী মৃত জয়নাল আবেদীন। স্বামীর বাড়ী হাজীগঞ্জ উপজেলার নওহাটা গ্রামে। তার দুই ছেলে। বড় ছেলে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আমির হোসেন। ছোট ছেলে মো. আরিফ হোসেন। সে মাঝে মাঝে রিকশা চালায়। আবার রিক্সা চালাতে না পারলে ভিক্ষা করে সাহায্যে তোলেন।
এসএম মিরাজ মুন্সীও একজন সংবাদকর্মী। সে স্থানীয় মানবসমাজ পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক। ভিডিও চিত্রে তিনি প্রথমে উল্লেখ করেছেন ‘মায়ের প্রতি পাগল ও বিক্ষোভ ছেলের ভালোবাসা। ভিখারি ছেলের টাকা দিয়ে চলছে মায়ের চিকিৎসা ও খাবার। কোথায় আমাদের মানবতা।’
মা-ছেলের এই মানবিক জীবনে এগিয়ে আসা সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম সিফাত লিখেছেন, ‘মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ কষ্ট জমা রাখি। মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিটির নাম ‘মা’। সেই ‘মা’ পড়ে আছে রাস্তার পাশে পরিত্যাক্ত আবর্জনার ভাগারে।
শনিবার তিনি ওই মাকে গিয়ে দেখেন পরিত্যাক্ত ডাস্টবিনের পাশে অনেকগুলো ময়লাযুক্ত কাপড় পেচিয়ে শুয়ে আছেন সত্তর বছর বয়সী মা। শরীরে প্রায় অংশ পঁচে গেছে। কয়েক দিন ধরে গোসল না করাতে শরীর দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তাৎক্ষণিক হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন রনির নির্দেশে উপ-পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন ওই মায়ের কাছে আসলেন। নিয়ে গেলেন হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
জানতে চাইলে সাংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম সিফাত বলেন, মাথা গোজাবার একটু ছাদ, পেটে কিছু দানা-পানা, শরীরের জ্বালা-পোড়া আর ব্যাথার জন্য কিছু ঔষধ। তাতেই হয়তো তিনি বেঁচে থাকার শক্ত কিছু খোঁজে পাবেন। তার সাথে সহযোগিতা করেছেন মো. মজিবুর রহমান রনি, জসিম উদ্দিন ও বেলায়েত সুমনসহ আরো অনেকে।
সংবাদকর্মী এসএম মিরাজ মুন্সী বলেন, প্রথমে হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আলী নেওয়াজ রোমান ওই মাকে একবার হাসপাতালে নিয়ে সেবা ও খাবার দিয়েছেন।
এখন আবার তিনি চেষ্টা করবেন ওই মায়ের পাশে থাকার। আমরা কয়েকজন চেষ্টা করছি ওই মা-ছেলের পাশে থাকার।
ভারসাম্যহীন ছেলে আরিফ হোসেন বলেন, আমাগো পরিবারে বড় লোক আছে। কেউ খবর নেয় না। রাস্তার পাশে মাকে নিয়ে যাযাবার অবস্থায় থাকি। মায়ের জন্য কেউ কিছু করলে আমি খুশি হই।