সাইফুল ইসলাম সিফাত : চাঁদপুর জেলা শহর থেকে শুরু করে আঞ্চলিক মহাসড়ক এমনকি উপশহরের সড়কগুলোতে কিশোর-তরুণ চালকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেপরোয়া এসব কিশোর চালকের বয়স ১৫-১৭ বছরের বেশি নয়।
চাঁদপুর-কুমিল্লা, রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-কচুয়া মহাসড়ক এমনকি, শাহরাস্তি, কচুয়া, মতলব, ফরিদগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি, অটোরিকশা, পিকআপসহ নানা ধরনের যানবাহনে চালকের আসনে বসছে কিশোর-তরুণেরা। অশিক্ষিত, অল্প বয়সী, অপরিপক্ব আর লাইসেন্সবিহীন এসব চালকের কারণে উল্লেখিত সড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনার হার দিনদিন যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের মিছিল। সম্পদহানি হচ্ছে অহরহ।
জেলায় এ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় কি পরিমাণ হতাহত হয়েছে এর পরিসংখ্যান কোনো দপ্তর দিতে পারেনি।
গত কয়েক দিনে সড়কগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ গাড়িতে চালকের আসনে বসে আছে কিশোর-তরুণ। তাদের সহকারীর বয়সও খুব একটা বেশি না।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, অন্তত অর্ধশত কিশোর-তরুণ চালক নানা ধরনের গাড়ি চালাচ্ছে এসব সড়কে।
যাত্রীদের অভিযোগ, এক ধরনের ভয় নিয়ে বাধ্য হয়ে কম বয়সী এসব চালকদের গাড়িতে ওঠা হয়। তারা খুব বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। ট্রাফিক আইনের কোনো ধারণাই যেন তাদের নেই। প্রায় সময় অন্য গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
শুধু তাই নয়, আন্তঃজেলা ট্রাক গুলো চালাচ্ছে অনেক কিশোর। তারা চালকের সহকারী হিসেবে ট্রাকে থাকলেও বেশি সময় চাঁদপুর শহর থেকে জেলার বিভিন্নস্থানে তারা ট্রাক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ট্রাক নিয়ে এসে স্থানীয় চালকরা নিজ বাড়ির কাছে নেমে গিয়ে ট্রাক গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে স্টিয়ারিংয়ে বসিয়ে দেন সহকারীদের। এসময়টুকু মূল চালকরা বাড়িতে কাটান। আবার ওই সহকারী মাল লোড আনলোড করে ট্রাক চালিয়ে নির্দিষ্টস্থানে এনে মূল চালকের হাতে তুলে দেন। একই কাজ করেন বাইরে থেকে আসা ট্রাক চালকরাও।
এমনই একটি ঘটনা লক্ষ করা যায় গতকাল বুধবার দুপুরে। চট্টগ্রাম থেকে মালবোঝায় গাড়ি চালিয়ে হাজীগঞ্জে আসেন কুষ্টিয়ার একজন চালক। এরপর তিনি হাজীগঞ্জ বিশ্বরোড মোড়ে নেমে যান। রামগঞ্জ ভাড়া ঠিক করা আছে। পণ্য নিয়ে যেতে হবে ফরিদপুর। গাড়ীর চাবি সহকারী ১৯ বছরের লতিফকে দিয়ে ছেড়ে দেন।
তার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে লতিফ বলেন, “আপাতত শিখছি। পরে লাইসেন্স বানাবো।”
কথা বলার পরে গাড়ী টেনে চলে গেলেন রামগঞ্জের দিকে। এদের দেখার যাদের দায়িত্ব তারা নজর দেন না। যেন ঘুমিয়ে আছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
চাঁদপুর নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) সভাপতি এম এ লতিফ জানান, সড়কে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো অসচেতনতা। যাত্রী, পথচারী, চালক সচেতন হলেই রোধ করা সম্ভব হবে দুর্ঘটনা। আর বিশেষ করে কিশোর চালকদের বিষয়ে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা জেলা প্রশাসককে বার বার অনুরোধ করেছি। কিন্তু কার্যত কোন পদক্ষেপই চোখে পড়ছেনা।
তিনি সড়কে গতিরোধক নিমার্ণসহ যানবাহনের মূল চালকদের নির্দিষ্টস্থানে গাড়ি পৌঁছাতে অনুরোধ করেন।