শাকিল হাসান,ফরিদগঞ্জ ॥ ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পুর্ব ইউনিয়নে ১৯৯৩ সালে স্থানীদের দেওয়া ৩৩ শতাংশ জমির উপর ত্রিদোনা গ্রামে ত্রিদোনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিধি মোতাবেক ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিবের অনুকুলে উক্ত সম্পত্তি বিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে দাতারা রেজিষ্ট্রি করে দেয়।
পরবর্তীতে ২০০২ সালে অস্থায়ী ভাবে বেসরকারী রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত হয়ে একই বছর স্থায়ী রেজিষ্ট্রেশন লাভ করে। মাত্র ৪০ গজ দুরত্বের মধ্যে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাবেক শিক্ষা অফিসার ফরিদ উদ্দীন ১০ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে ক্ষমতার অপব্যহার করে, স্কুল শুন্য গ্রাম এবং মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া দলিল দেখিয়ে ১৫০০ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয় স্থাপন করার অভিযোগে দুদুক তদন্ত শুরু করেছে।
একই সাথে তার বিরুদ্ধে সরকারের ৭০ লক্ষ টাকা ক্ষতি সাধনের অভিযোগের রয়েছে। গত ২৮ জুন বৃহষ্পতিবার দুদুকের কুমিল্লা অঞ্চলের উপসহকারি পরিচালক মোস্তফা বোরহান উদ্দিন আহম্মদ ফরিদগঞ্জে এসে সরেজমিন দিনব্যাপী তদন্ত করে গেছেন।
এসময় তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা প্রকৌশল অফিস এবং উপজেলার গুপ্টি পুর্ব ইউনিয়নে ত্রিদোনা গ্রামে নির্মিত ত্রিদোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ত্রিদোনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থান , ত্রিদোনা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন ও আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলেন।
ত্রিদোন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়ালি উল্ল্যাহ জানান, এছাড়া ২০০৩ , ২০১১ ও ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই বিদ্যালয়টি ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তু কোন এক অশুভ শক্তির নেক নজরে প্রাণ চঞ্চল ও শিশুদের কোলাহল এবং উৎসব মূখর বিদ্যালয়টির কপালে দূর্ভাগ্য নেমে আসে।
অশুভ চক্রটির লালসার শিকার হয়ে শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র। সুবিধাভোগী ও অর্থ লোভীরা তাদের স্বার্থহাসিলের জন্য বিদ্যালয়টির নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার অপ-চেষ্টা শুরু করে। তারা তাদের সুবিধা হাসিলের জন্য বর্তমান সরকাররে মহৎ উদ্যোগকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। ২০১২ সালে সবার জন্য শিক্ষা ও সার্বজনীন করার লক্ষে সারাদেশে বিদ্যালয় বিহীন গ্রামকে শিক্ষার আওতায় আনার জন্য ১৫শ’টি বিদ্যালয় বিহীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন ও বেসরকারী রেজিষ্ট্রাড স্কুল গুলো জাতীয় করণের উদ্যোগ নেয়।
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণের আওতায় বিদ্যালয়টি পড়লেও তৎকালিন শিক্ষা অফিসার ফরিদ উদ্দীন এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রদান করায় তা আর জাতীয় করণ করা হয়নি। উল্টো ত্রিদোনা গ্রামটিকে বিদ্যালয় বিহীন গ্রাম দেখিয়ে ২২/৬/২০১১ তারিখে ৪৭৪৯ নং ভুয়া দলিল নাম্বার দাখিল করে বিদ্যালয় বিহীন গ্রামে ১৫০০টি সরকারি প্রা: বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত করা হয়।
বাস্তবতা হচ্ছে ওই দলিল নাম্বারটি হচ্ছে ১৯৯৩ সালে ওই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ত্রিদোনা বেসরকারী রেজিঃ স্কুলের। বরং ত্রিদোনা ফোরকানিয়া মাদ্রাসার জমি স্কুলের নামে দেখায়। এছাড়া বিদ্যালয়টি ২০১১ সালে স্থাপন করা হয়েছে বলা হলেও ভুমিদাতা কর্তৃক ৩/৩/২০১২ সালের দলিল করে দেয়ার অঙ্গীকার নামা এবং দরপত্র আহ্বান করে ২০১২ সালের ২ জানুয়ারী জাতীয় পত্রিকার বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয় ।
উপজেলা প্রকৌশলী মামুন খান টেন্ডার আহ্বান শেষে অন্তত নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে লেআউট প্রদান করে ভবনের কাজ সম্পন্ন করেন। এর আগে ওই সময়ের উপজেলা প্রকৌশলী রুহুল আমিন বিদ্যালয় ভবনের জন্য স্থান নির্ধারণ করেন।
২০১৭ সালের ৪ মে ত্রিদোনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও অর্থে প্রলুব্ধ হয়ে ভুল তথ্য দিয়ে সরকারি অর্থের ক্ষতি সাধণের অভিযোগ তুলে দুদুকের কাছে অভিযোগ করেন ত্রিদোনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়ালি উল্ল্যাহ ভ্ূঁইয়া ।
এই অভিযোগের আলোকে চলতি বছরের গত ২৮ জুন বৃহষ্পতিবার দুদুকের কুমিল্লা অঞ্চলের উপসহকারি পরিচালক মোস্তফা বোরহান উদ্দিন আহম্মদ ফরিদগঞ্জে এসে সরেজমিন দিনব্যাপী তদন্ত করে গেছেন। এসময় তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা প্রকৌশল অফিস এবং ত্রিদোনা সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা সরেজমিন তদন্ত করেন।
এসময় তথ্য গোপনের অনেক চিত্র তদন্তে উঠে এসেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী ড. জিয়াউল ইসলাম মজমুদার সোমবার জানান, দুদুকের এই কর্মর্কতা তদন্তকালে যেসব তথ্য ছেয়েছেন, তা তিনি সরবরাহ করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা দুদুকের কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ে উপসহকারি পরিচালক মোস্তফা বোরহান উদ্দিন আহম্মদ জানান, তিনি তদন্তকালে যা পেয়েছেন সেভাবেই রির্পোট প্রদান করবেন।