শাহরাস্তিতে নববধূর হত্যার সাত দিন পর মামলা নিল পুলিশ

শাহরাস্তি প্রতিনিধি : শাহরাস্তি উপজেলায় নববধূ মেহজাবীন সুলতানা ইতি (১৯) মৃত্যুর সাত দিন পর অবশেষে শাহরাস্তি থানার পুলিশ মামলা নিয়েছে।

গত শুক্রবার রাত সোয়া ১০ টায় নিহত গৃহবধূর ভাই নুরে আলম বাদী হয়ে মেহজাবীনের স্বামীসহ চারজনকে আসামী করে নারী ও শিশু নিযাতন দমন আইনে মামলাটি করেন।

গত ২৩ জুন স্বামীর বাড়িতে মেহজাবীন সুলতানা ইতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি,শশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকা না পেয়ে মেহজাবীনকে হত্যা করেছেন।

মেহজাবীনের পরিবার ও এলাকা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল ২ লাখ টাকা দেন মোহরে শাহরাস্তি পৌরসভার ঘুঘুশাল পালবাড়ির আমির হোসেনের কনিষ্ঠ মেয়ে মেহজাবীন সঙ্গে উপজেলার মেহার দক্ষিণ ইউপি’র মালরা মজুমদার বাড়ির আব্দুল কুদ্দুসের মেঝো ছেলে একরামুল হক রাজুর (২৭) বিয়ে হয়। এ সময় পাত্রপক্ষকে ৮২ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার,৫০ হাজার টাকা ও আসবাব পত্র দেয়ার কথা।

মামলার বাদী নুরে আলম জানান, আরও টাকা ও ফার্নিচারের জন্য বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শশুরবাড়ির লোকজন তাঁর বোনকে নির্যাতন শুরু করে।এ নিয়ে কয়েকবার সালিস বৈঠকও হয়। তিনি আরও বলেন, আমারা অসহায় গরীব।তাদের কাছে সময় চেয়ে ছিলাম।কিন্তু তারা সময় দিল না।বিয়ের মাত্র ২ মাস ১৮ দিনে মাথায় আমার বোনটাকে মেরে ফেলা হলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেহজাবীন সুলাতানা মারার পর আত্ম হত্যা বলে এলাকায়য় অপপ্রচার করে শশুর বাড়ির লোকজন। ওই রাতে থানা অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। তখন মেহজাবীনের পরিবার হত্যা মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা নেয়নি অভিযোগ নিহতের পরিবারের।

পরে মেহজাবীন সুলতানার পরিবার পরিবার ২৭ জুন জেলা পুলিশ সুপার ও ২৯ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সঙ্গে দেখা করেন।এরপর পুলিশ মেহজাবীনের মামলাটি রেকড করে।মেহজাবীন এবার এসএসসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছেন। সে করফুলেন্নেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলো।

মেহজাবীনের বড় বোন তাহমিনা বলেন, আমার বোন রোজা রাখা অবস্থা আত্ম হত্যা করতে পারে না।সে আল্লাহ হুকুম পালনের জন্য চেষ্টা করছে। সে আত্ম হত্যার মতো পাপ কাজে লিপ্ত হবে কেনো। সে গলায় ফাঁস দিলে তার লাশ কে নামিয়েছে এ তথ্য পাওয়া যায়নি।আমার পরিবার গিয়ে দেখি তার লাশ নিচে রাখা।তার গায়ে ওলানো জড়ানো।ঘরের আড়ার সাথে ওলনা বেধে তারা অপপ্রচার করে।সন্ধ্যা বেলায় পরিবারের সদস্য ঘরে উপস্থিত থাকায় কি ভাবে সে গলায় ফাঁস দিবে।

ইফতারের সময় যৌথ পরিবার ঘরে তার শশুর শাশুরি বাশুর বাসুরের স্ত্রী দেবর থাকায় কিভাবে সে আত্ম করবে।গলায় ফাঁস দিলে দরজা বন্ধ করে দিবে কিন্ত দরজা খোলা ছিলো।তারা তার হাতে সরিসার তৈল মালিশ করছে ও ডাক্তার নিয়েছে কেনো। ঘটনার পর আমরা তাদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাইনি। আমার বোন বিশ দিন পূর্বে আমাদের বাড়ি থেকে শশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় একটা মোবাইল নিয়ে যায়। শশুর বাড়ির অত্যাচারের বিষয় গুলো রেকড করে পিতা মাথা শুনালে তারা মেহজাবীনের কথা বিশ্বাস করবে

।মেহজাবীনের স্বামী বিষয়টা জানারপর তার বড় ভাই হাসানকে জানায়। ঘটনার দিন ৩ টায় মোবাইলটি দেয়ার জন্য আমাদের কল দিয়ে হাসান বলে মোবাইল না দিলে তাকে জবাই করে ফেলবো।আমার মা তাদেরকে শান্ত হওয়ার জন্য বলে। সন্ধ্যার সময় খবর পাই সে আত্ম হত্যা করেছে। আমরা হত্যার বিচার চাই। ন্যায় বিচার না হলে টাকা দিয়ে অপরাধী পার পেয়ে অখংখ্য ইতি শশুর বাড়িতে লাশ হয়ে থাকবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান,বিয়ের ঘটক সাহ আলম অর্থের লোভ অশিক্ষিত ছেলের সাথে শিক্ষিত মেধাবী ছাত্রীটাকে এ পরিবারে বিয়ের আয়োজন করে। এ ঘটনার সে হত্যা দামাচাপা দেয়ার জন্য নিহতের পরিবারকে মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ভীভ্রান্তি চালাচ্ছে। ছেলের পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে।তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।

মেহজাবীন সুলতানার মা ফিরোজা বেগম জানান,অভাবের কারণে মেয়েটাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছি।তারা আমার মেয়েটাকে বাচঁতে দিলো না।আমি মেয়ের হত্যার বিচার চাই।সমাজের প্রভাবশালীরা আমি গরীব বলে কিছু টাকা নিয়ে আপোষ করার প্রস্তাব দেয়।তারা আমার পরিবারকে হুমকি প্রদান করছে টাকা দিয়ে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করা যায়।আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ও জেলা পুলিশ সুপারের দৃষ্ট কামনা করছি।আমি গরীব বলে আজও এ হত্যার কোন আসামী আটক হয়নি।

আমি ন্যায় বিচার চাই।খুনিদের শাস্তি হলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।সমাজের মানুষ শিক্ষা নিবে ইতির মতো আর কারো জীবন দিতে হবে না। আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানাই উনাদের নির্দেশে পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নাছির উদ্দিন জানান, আসামীরা পলাতক রয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করা যায়নি।

একই রকম খবর

Leave a Comment